শতবর্ষে পড়ল অণ্ডালের কাজোড়ার হাজরা পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো
বর্তমান | ১১ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: অণ্ডাল থানার কাজোড়া গ্রামে হাজরা পরিবারের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজো এবার শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। ভিন জেলা ও দূর-দূরান্তে থাকা আত্মীয়রা পুজোতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। বংশের নবপ্রজন্মও পুজোতে ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের পুজো শুরু হয় বেনারসের এক তন্ত্র সাধকের নির্দেশে। সেই রীতি এখনও বজায় রেখে নিষ্ঠার সহিত পুজো সম্পন্ন হয় একদিনেই।
হাজরা পরিবারের প্রবীণ সদস্য রামশোভন হাজরা বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা ওড়িশার বাসিন্দা ছিলেন। সেখান থেকে আমরা প্রথম বীরভূম জেলায় আসি। বীরভূম থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে কাজোরাতে একটি অংশ এসে বসতি গড়ে। আমার ঠাকুরদার নাম রামকিঙ্কর হাজরা। তিনি এই এলাকার জমিদার ছিলেন। তাঁর একটি পুত্রসন্তান ছিল। ওই পুত্রের বিবাহের পরে আকস্মিক মৃত্যু হয়। সেই সময় ঠাকুরদা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে বেনারস চলে যান। সেখানে এক তন্ত্র সাধক স্বামী রামেশ্বর আনন্দজীর কাছে তিনি দীক্ষা নেন। সেখানে এক জঙ্গলে তিনি থাকতেন। ঠাকুরদা যে নিঃসন্তান হয়ে গিয়েছিলেন সেই বিষয়ে ওই তান্ত্রিককে জানান। বলেন, আমার জমিদারি কে সামলাবে। তখন স্বামী রামেশ্বর আনন্দজী ঠাকুরদাকে বলেন, তোর আবার সন্তান হবে। তুই পুত্রেষ্টি যজ্ঞ কর। যজ্ঞের পরে ১৯১৯ সালে কার্তিক মাসে আমার বাবা রামশঙ্কর হাজরার জন্ম হয়। তখন রামেশ্বর আনন্দজী ঠাকুরদাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করার। তখন এলাকার দুর্গামন্দিরে পুজো শুরু হয়। তারপরে বাড়ির পাশে ১৯২৪ সালে মন্দির তৈরি করা হয়। ১৯৯০ সালে ঠাকুরদার মৃত্যু হয়। বর্তমানে রামশঙ্কর হাজরার আমরা চার সন্তান। বাবার আমল থেকেই পুজোর জাঁকজমক কমে গিয়েছিল। ১৯৫০ সালে আমাদের জমিদারি চলে যায়। পুজোর খরচের জন্য জমিজায়গা দেবত্র করা হয়েছিল। সেইগুলি সব দখল হয়ে যায়। অর্থবল কমে যাওয়ায় প্রায় এক হাজার গ্রামবাসীকে ভোগ খাওয়ানোর রীতিও বন্ধ হয়ে যায়। এই বছর অবশ্য আমরা আজকের দিনে প্রায় এক হাজার মানুষকে ভোগ খাওয়াচ্ছি।
পরিবারের সদস্যা উমা হাজরা ও রীতা হাজরা বলেন, আমাদের প্রতিমার বিশেষত্ব হল সেই পুরোনো কাঠের কাঠামোর উপরই প্রতিবছর প্রতিমা গড়া হয়। বেদিটি একটি সেগুন কাঠের চৌকি। সেটাও ঠাকুরদার আমলের। প্রতিমার দু’পাশে জয়া ও বিজয়া থাকেন। এছাড়াও দু’পাশে ঋষি বিশ্বনাথ চৌধুরী তথা নারদাজী মুনিমনের মূর্তি থাকে। এছাড়াও দু’টি পরীর মতো মূর্তি থাকত, সেটা এখন করা হয় না।
আরও এক সদস্যা ভারতী হাজরা বলেন, নবমীতে এক দিনেই পুজো সম্পন্ন করা হয়। পুজোতে পায়েস ও লুচি ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়াও অন্নভোগ দেওয়া হয় মাকে। বর্তমানে পরিবারের প্রতিটি সদস্য নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোতে অংশ নেন।-নিজস্ব চিত্র