• বাড়ির ভিতর দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্য
    বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসেছিলেন বধূ। সোমবার সকালে সেখান থেকেই দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার হল। মহম্মদবাজার থানার কুমোরপুর গ্রামে এঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃতদের নাম সঞ্জিত অঙ্কুর(৪০) ও তিথি অঙ্কুর(২৭)। এদিন সকালে বিছানায় তিথির দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। একই ঘরে তাঁর স্বামীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, স্ত্রীকে খুন করে সঞ্জিত আত্মঘাতী হয়েছেন। পুলিস দু’টি দেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বাবা মাকে হারিয়ে দম্পতির তিন অথৈ জলে পড়েছে।


    ওই বধূর পরিবারের সদস্যরা জানান, এর আগেও তিথির বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। পাঁচ বছর আগে বক্রেশ্বরের তেঁতুলগ্রামের বাসিন্দা সঞ্জিতের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তিথির দু’পক্ষেরই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে এই দম্পতির মধ্যে নানা কারণে বিবাদ লেগে থাকত। ভাইফোঁটার দিন থেকে তিথি স্বামীর সঙ্গে বাপের বাড়িতে এসে থাকছিলেন। বাবাকে বলেছিলেন, এখন গ্রামে কাজ নেই। এখানেই খড়ি কোম্পানিতে কাজ করে খাব। পরে শ্বশুরবাড়ি যাব।


    তিথির বাবা বামদেব অঙ্কুর বলেন, ওরা নিজেরাই রান্না করে খেয়েছে। ছেলেমেয়েগুলোকে খেতে দিয়েছে। তারপর শুতে গেল। মাঝরাতে ওদের ছোট মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে মায়ের খোঁজ করছিল। তাই বড় ছেলে দু’টি ওদের মাকে ডাকতে ঘরে যায়। তারপরই ওরা আমাদের ডাকে। ঘরে ঢুকে দেখি, বিছানায় মেয়ে পড়ে আছে। আর পাশেই জামাইয়ের দেহ ঝুলছে। এরপর প্রতিবেশীরা আসেন। চড় মারলে যেমন দাগ হয়, তিথির গালে তেমন দাগ ছিল। গলাতেও দাগ ছিল। ঘরে একটি বড় লাঠি পড়ে ছিল। আমার মনে হচ্ছে, জামাই প্রথমে আমার মেয়েকে খুন করে তারপর গলায় দড়ি দিয়েছে। সম্ভবত ওদের মধ্যে কিছু নিয়ে ঝগড়াঝাটি হচ্ছিল। মেয়ে বলেছিল, এখন ক’দিন বাড়িতে থাকি। কিন্তু কী করে এসব হল-বুঝতে পারছি না। আমরা চাই, জামাইয়ের বাড়ির লোকজন আসুক। বাপ-মা মরা তিনটে ছেলেমেয়ের কী হবে-তা সবাই বসে ঠিক করুক।


    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্বশুরবাড়িতে কোনও ঘটনা নিয়ে দম্পতির মধ্যে বিবাদ চলছিল। ভাইফোঁটার পর স্ত্রী ও সন্তানদের শ্বশুরবাড়িতে রেখে নিজের বাড়ি গিয়েছিলেন সঞ্জিত। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই বা‌ইক নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। কিন্তু তিথি আর শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে চাইছিলেন না বলে তাঁর বাবার দাবি। প্রতিবেশীরা জানান, তিথি অত্যন্ত দুঃস্থ পরিবারের মেয়ে। এভাবে ওদের দু’জনের মৃত্যুতে তিন সন্তান অনাথ হয়ে গেল।


    পুলিস মৃতার বাপেরবাড়ি থেকে দড়ি, লাঠি সহ বেশকিছু সামগ্রী উদ্ধার করেছে। টিনের চালার বাড়িটি লাল ফিতে দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। মহম্মদবাজার থানার এক আধিকারিক বলেন, দু’টি দেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিউড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক অশান্তির কারণেই মৃত্যু বলে মনে হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
  • Link to this news (বর্তমান)