টিকিটের ‘পেমেন্ট’ ব্যক্তিগত ইউপিআইতে!, মহিলা যাত্রী-কন্ডাক্টরদের আঁতাতে ক্ষতির মুখে এসবিএসটিসি
বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: মহিলা যাত্রীদের একাংশের সঙ্গে সরকারি বাসের কন্ডাক্টরের অশুভ আঁতাত। টিকিট না কেটেই মাসের পর মাস যাতায়াত করছেন স্কুল শিক্ষিকা থেকে সরকারি কর্মীরা। স্পেশাল যাত্রীদের জন্য সিট রাখার তাগিদও দেখা যায় কন্ডাক্টরদের একাংশের মধ্যে। যার জেরে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এসবিএসটিসির। বিষয়টি নজরে আসতেই তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই মহিলা যাত্রীরা টিকিট না কেটে প্রতি মাসে কন্ডাক্টরের ইউপিআইয়ে একটি থোক টাকা পাঠিয়ে দেন। অনেকে আবার নগদেও টাকা দিয়ে কন্ডাক্টরের ‘ঋণ’ শোধ করেন। শহরতলি এলাকায় এই ঘটনা বেশি ঘটছে।
দুর্গাপুরের এক শীর্ষ আধিকারিক নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সাধারণ যাত্রী সেজে একদিন দুর্গাপুর থেকে আসানসোল অভিমুখে আমাদের একটি বাসে উঠি। দুর্গাপুরের একটি নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে চার মহিলা যাত্রী চেপেই, কন্ডাক্টরকে মজার ছলে বকা দিয়ে বললেন, বাসটা দেরি করলেন কেন স্কুলে যে দেরি হয়ে যাবে। কন্ডাক্টরও তাঁদের বসার ব্যবস্থা করে দিলেন। আলোচনাতেই বোঝা গেল তাঁরা শিক্ষিকা। টিকিট না কেটেই দেখলাম মঙ্গলপুর শিল্পতালুকে নেমে গেলেন। সেখানে আমাদের কোনও স্টপেজ নেই। নামার আগে কন্ডাক্টরকে বলে গেলেন, আপনার জিপে-তে আমাদের গত মাসের টাকা পাঠানো আছে দেখে নেবেন। টিকিট চেকিংয়ের দায়িত্বে থাকা আরও এক আধিকারিক বলেন, টিকিট চেকাররা সবাই পুরুষ সদস্য। বিনা টিকিটে যাতায়াত করা মহিলাদের ফাইন করতেও বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই তাঁরা টিকিটও কাটছেন না, ফাইন চাইলে ফাইনও দিচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, কন্ডাক্টর ও যাত্রীদের মধ্যে আঁতাত থাকায় চেকারদের সামনে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই ডাকাবুকো মহিলা নিত্যযাত্রীদের। তাঁরাই চেকারদের সঙ্গে ঝগড়া করে বাস মাথায় তুলছেন। চেকারদের ফাইন কাটার আসল উদ্দেশ্যই সাধিত হচ্ছে না। আসানসোল, দীঘা, সিউড়ি, কালকাতা শহরতলি এলাকার রুটগুলিতে এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি। যার জেরে বাস চালিয়ে ডিজেলের খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে সরকারি পরিবহণ সংস্থা।
তাঁদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শেষ ছ’ মাসে টিকিট না কাটার জন্য কন্ডাক্টরদের কাছে মোট ফাইন আদায় করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। যাত্রীদের কাছ থেকে ফাইন আদায় হয়েছে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। টিকিট না কাটায় ধরা পড়েছেন তিন হাজার যাত্রী। এটি হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এসবিএসটিসির এক আধিকারিক বলেন, প্রতিদিন আমাদের প্রায় সাড়ে ছ’শো বাস রাস্তায় নামে। গড়ে দিনে আমাদের বাস দেড় লক্ষ কিলোমিটার রাস্তা যায়। সেখানে চেকার রয়েছে ১১০ জন। খুব বেশি হলে ১৫ হাজার কিলোমিটার তাঁরা চেকিং করতে পারেন। তাতেই এই পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। এর থেকে স্পষ্ট, টিকিট না কাটা যাত্রীদের জন্য প্রতিদিন বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সরকারি সংস্থার। এসবিএসটিসির এমডি প্রণবকুমার ঘোষ বলেন, বিনা টিকিটে যাতায়াত মেনে নেওয়া হবে না। একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে।