থার্মোকল জমে জোড়াপানি নদী হয়েছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড
বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির ঘোঘোমালিতে জোড়াপানি নদী থার্মোকলের বাক্সে ঢেকে গিয়েছে। ৩৭নম্বর ওয়ার্ডে জোড়াপানি কার্যত এখন বাজারের ডাম্পিংগ্রাউন্ডে পরিণত হয়েছে। নদীটি মশার বংশ বিস্তারের আদর্শ জায়গা হয়ে ওঠায় ডেঙ্গু সংক্রমণের আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা।
নদীর এই দশায় পতঙ্গবিদরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পতঙ্গবিদ ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ধীরাজ সাহা বলেন, কোনও কীটনাশক বা মশা মারার তেলে আর মশা মরছে না। গত দু›বছর ধরে সব ধরনের মশা মারার তেলের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে মশার মধ্যে। তাই ডেঙ্গু ও মশা বাহিত অন্য রোগ থেকে বাঁচার একটাই পথ মশার বংশবিস্তার রোধ করা। তাই কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না।
এই সতর্ক বার্তা অনুযায়ী ৩৭নম্বর ওয়ার্ডের ঘোগোমালি বাজারে জোড়াপানি নদী মশাবাহিত রোগের আঁতুর ঘর হয়ে রয়েছে। পাশের বাজার থেকে বড় বড় থার্মোকলের বাক্স সহ যাবতীয় জঞ্জাল প্রতিদিন নদীতে ফেলা হয়। ওই এলাকায় জোড়াপানি নদী এই জঞ্জালে ভরে গিয়েছে। যা থেকে ডেঙ্গুর আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
জোড়াপানির এই অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অলক ভক্ত। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বহুবার ব্যবসায়ী কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে। জরিমানার ভয়ও দেখানো হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ী সমিতি কোনও সহযোগিতা করছে না। একবার নদী সাফাই করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও ফের বাজারের জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। আমরা ঠিক করেছি, এই বাজার লাগোয়া নদীর পাড় উঁচু করে ফেন্সিং দিয়ে দেওয়া হবে। যাতে বাজার থেকে কোনও আবর্জনা কেউ নদীতে ফেলতে পারেন।
অধ্যাপক ধীরাজ সাহা বলেন, দু›বছর আগে থেকেই মশার মধ্যে কীটনাশক বা মশা মারার তেল স্প্রে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। বিষয়টি আমরা শিলিগুড়ি পুরসভা এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে জানিয়েছিলাম। এখন পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর। কোনও মশা মারার তেল কাজ করছে না। এই পরিস্থিতিতে তেলের পরিমাণ বাড়িয়ে মশা মারতে যাওয়া হয় তাহলে সেটা আমাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনবে। তাই মশা ও মশাবাহিত রোগের থেকে রেহাই পাওয়ার একটাই পথ, কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে নাগরিকদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। নদীতে জঞ্জাল ফেলে জল জমতে সাহায্য করার পাশাপাশি বহুতল নির্মাণ ডেঙ্গু সংক্রমণে সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করেন পতঙ্গবিদরা।
তিনি বলেন, মশাদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠার ব্যাপারে আমাদের গবেষণা লদ্ধ ফলের রিপোর্ট আমরা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিলিগুড়ি পুরসভা এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে পাঠিয়েছি।
কোথাও যাতে বহুতল নির্মাণে ইট ভেজানোর জন্য চৌবাচ্চা বানিয়ে জল জমিয়ে না রাখা হয়। এই সব জায়গা থেকেই মশার বেশি বংশ বিস্তার হচ্ছে। ডেঙ্গুর সংক্রমণও বেশি হয়। -নিজস্ব চিত্র