• মাদারিহাট ঝুলে ভোট কাটাকাটিতেই
    বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • তন্ময় মল্লিক, মাদারিহাট: নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেও উত্তরবঙ্গে ঠান্ডার লেশমাত্র নেই। কলকাতা, বর্ধমানের মতোই শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়িতেও প্রায় একই রকম গরম। রাতেও পাখা চালাতে হচ্ছে। বেলা ৯টার পর থেকেই রোদে দাঁড়ালে অস্বস্তি হচ্ছে। কার্তিকের শেষ। চুরি হয়ে গিয়েছে বিকেল। ৫টা বাজতেই ঝুপ করে নেমে আসছে অন্ধকার। তবুও দুপুরে রাস্তাঘাটে তেমন ভিড় নেই। ভোট প্রচারে নেই রাজনৈতিক দলের মাইকিং। চায়ের দোকানে নেই ভোট নিয়ে চর্চা। হয়তো উপনির্বাচন বলেই। লাইটপোস্টে, দোকানের চালায় রাজনৈতিক দলের পতাকা, প্রার্থীদের ছবি না থাকলে বোঝার উপায় ছিল না, রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে হাইভোল্টেজ উপনির্বাচনটা হচ্ছে এই মাদারিহাটেই।


    বিন্নাগুড়ি জলপাইগুড়ি জেলায়, কিন্তু আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট বিধানসভার অন্তর্গত। বিন্নাগুড়িতে বিজেপির ভালো ভোট আছে। লোকসভাতেও ভালো ফল করেছিল। তবে, উপনির্বাচন নিয়ে দলের নীচেরতলায় রয়েছে সংশয়। কারণ নির্দল প্রার্থী বুদ্ধিমান লামা। ইমেজ খুব ভালো। গোর্খাদের মধ্যেও ভীষণ জনপ্রিয়। এতদিন বিজেপির সঙ্গেই ছিলেন। এবার নির্দল প্রার্থী। তাই বিজেপির নেপালি ভোটে ভাঙনের আশঙ্কা।


    বিন্নাগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে বইয়ের দোকানে বসে গোপাল চৌধুরী এসব কথা বলার সময় তাঁর চোখেমুখে হতাশা। রাজনীতি করেন? গোপালবাবুর উত্তর, ‘এক সময় আরএসপি করতাম। তারপর বিজেপি। এখন অন্যের দোকানে কাজ করি। তাই রাজনীতি তেমন করি না। আর করেই বা কী হবে? পঞ্চায়েতে বিজেপির টিকিটে জিতে একজন তৃণমূলে চলে গেল। এই তো রাজনীতির অবস্থা!’ এবার ভোটে কী হবে? উত্তর এল, ‘বলা কঠিন। তবে লামা ভোটে দাঁড়ানোয় ক্ষতি বিজেপির।’


    মাদারিহাটে চলছে ভোট কাটাকাটির অঙ্ক। বিজেপির ভোট কমছে। তাই জেতার একটাই পথ, তৃণমূলের ভোট ভাঙানো। সেটাই টার্গেট। রাঙালিবাজনা পঞ্চায়েতের শিশুবাড়িতে গাছে পতাকা বাঁধছিলেন কংগ্রেস নেতা মুস্তাফা রহমান। পঞ্চায়েতের ২৩টি আসনের একটিও কংগ্রেস পায়নি। মুস্তাফা সাহেবের স্বীকারোক্তি, ‘এখানে আমরা দুর্বল। তাও যেটুকু ভোট পাওয়া যায় সেটাই লাভ।’


    লাভটা কংগ্রেসের কতটা বলা কঠিন। কিন্তু তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট কাটলে বিজেপির লাভ ষোলোআনা। তাই তলে তলে মদত দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূলও বসে নেই। একদশক ধরে আদিবাসীদের একটা বড় অংশ বিজেপিকে সমর্থন জুগিয়ে আসছে। সৌজন্যে আরএসএস। তবে, বিজেপির আদিবাসী ভোট ভাঙাতে মরিয়া তৃণমূলও। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের একটা অংশকে পাশে টেনেছে। জন বার্লার বিদ্রোহ সেই কাজটা সহজ করে দিয়েছে। লোকসভা ভোটে যাঁরা গোপনে বিজেপির শিকড় কেটেছিলেন, এখন তাঁদের বিরোধিতা প্রকাশ্যে। বিজেপির বিপদটা এখানেই। 


    বিজেপিকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়েছে আরএসএস। মানুষের ছোট ছোট ক্ষোভ সুকৌশলে কাজে লাগাচ্ছে। দিন কয়েক আগে মাদারিহাটের যুব আবাসে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মিটিং ডেকেছিল তৃণমূল। উদ্দেশ্য, মহিলা ভোট এককাট্টা করা। উদ্যোক্তারা নির্বাচনী বিধির কথা মাথায় রেখে টিফিনের ব্যবস্থা করেননি। ছিল না জলের বোতল। সেটাকে ইস্যু করেই তলে তলে চলছে মহিলাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরির চেষ্টা।


    উপনির্বাচনে কর্পূরের মতো উবে যায় সাধারণ নির্বাচনের বড় মার্জিন। রায়গঞ্জের ৪৬ হাজারের, রানাঘাট দক্ষিণের প্রায় ৩৭ হাজারের মার্জিন মুছে গিয়েছে। তুলনায় মাদারিহাটের ১১ হাজার কিছুই নয়। তাই ‘গড়’ হলেও মাদারিহাট নিয়ে স্বস্তিতে নেই বিজেপি।
  • Link to this news (বর্তমান)