আল কায়েদা জঙ্গিদের টাকার জোগান! শিলিগুড়িতে এনআইএ জালে যুবক
বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও শিলিগুড়ি এবং সংবাদদাতা, হলদিবাড়ি: বছর দেড়েক আগের ঘটনা। বাংলাদেশ থেকে চার আল কায়েদা জঙ্গি গুজরাতে ঢুকেছে বলে খবর পায় আমেদাবাদের অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াড। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জানা যায়, ভারতের নাগরিকত্বের জাল নথি জোগাড় করে অনুপ্রবেশ করেছিল তারা। পরে মামলার তদন্তভার নেয় এনআইএ। সেই তদন্তের সূত্রে এবার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) জালে শিলিগুড়ির এক যুবক। সোমবার এনআইএর গোয়েন্দারা ওই ব্যক্তিকে এনজেপি থানায় ডেকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন। সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গে আল কায়েদার বিস্তৃত নেটওয়ার্কের হদিশ মিলেছে। সেই নেটওয়ার্কের শিকড় কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এদিন ওই সীমান্ত এলাকার হলদিবাড়িতে এক যুবকের বাড়িতেও অভিযান চালায় এনআইএ। প্রায় একই সময়ে কলকাতার বেনিয়াপুকুরের ক্যানেটাফার লেনে দু’জনের বাড়িতে তল্লাশি হয়। তাঁরা বাংলাদেশের আল কায়েদা জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য করেন বলে অভিযোগ। জঙ্গিদের তহবিলের উৎস খুঁজতে গিয়ে এঁদের হদিশ মিলেছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তল্লাশিতে সন্দেহজনক কিছু না মিললেও তাদের ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস ধরানো হয়েছে বলে খবর। একই তদন্তে এদিন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তল্লাশি চলে কর্ণাটক, বিহার, ত্রিপুরা ও অসমের বিভিন্ন জায়গায়। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ব্যাঙ্ক লেনেদেনের নথি, একাধিক মোবাইল ও ল্যাপটপ সহ নানা সামগ্রী।
এনআইএ সূত্রের দাবি, শিলিগুড়ির ওই যুবকের সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ব্যবহার করেই জঙ্গিরা এপারে আসে। তাই যুবকের ক্রেডিট কার্ড, ব্যাঙ্কের একাধিক পাসবই, পাসপোর্ট, ভিসা সহ বিভিন্ন নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আমেদাবাদে ধৃত জঙ্গিরা কোচবিহারের হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়েই সম্ভবত ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল যুবকদের মগজধোলাই করে অর্থ সংগ্রহ এবং তাদের সংগঠনে এনে নেটওয়ার্ক বিস্তার। হলদিবাড়ি দিয়ে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের সময় আরও কয়েকজন তাদের সহযোগিতা করেছিল বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। বর্তমানে তাদের কয়েকজন জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কাজও করছে। তাছাড়া, শিলিগুড়ির যে যুবককে এদিন জেরা করা হয়, তাঁর স্থায়ী ঠিকানাও হলদিবাড়ি। বছরখানেক আগে তিনি এনজেপির ক্যানাল রোডের কাঞ্চনবাড়িতে একটি বাড়ির তিনতলায় ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। ওই বাড়ির মালিকপক্ষের দাবি, তখন ওই যুবক জানিয়েছিলেন যে তাঁর বাড়ি পুঁটিমারিতে। ফুলবাড়ি বাজারে তাঁর কসমেটিক্সের দোকান রয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে এদিন ওই যুবকের ভাড়া নেওয়া বাড়ি ছাড়াও হলদিবাড়িতে আরও এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালায় এনআইএ। দু’জায়গা থেকেই বেশ কিছু নথি সংগ্রহ করেছে তারা। জেরার পর ওই যুবক বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করি। বছর খানেক আগে ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সমস্যা হয়েছিল। তা নিয়েই এনআইএ যা জানতে চেয়েছিল, বলেছি। কোনও অন্যায় করিনি। তাই ওরা গ্রেপ্তারও করেনি।’ হলদিবাড়ির যুবকও তল্লাশির সময় বাড়িতে ছিলেন না। কর্মসূত্রে তিনিও শিলিগুড়িতে রয়েছেন বলে খবর।