• ৫ হাজার অ্যাকাউন্টে দু’বার টাকা, প্রাথমিক রিপোর্টে তোলপাড়,  ট্যাব-অনিয়মে বিদ্ধ প্রধান শিক্ষকরা
    বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, মুর্শিদাবাদ ও মেদিনীপুর: তিনশোরও বেশি  স্কুল পড়ুয়ার ‘ট্যাব’ কেনার টাকা চলে গিয়েছে অন্য অ্যাকাউন্টে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনিয়মের ঘটনায় এবার প্রধান শিক্ষকদের একাংশেরই যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলল প্রাথমিক তদন্তে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। সোমবারই ‘ট্যাব’ কেনার অনুদান না পাওয়া পূর্ব বর্ধমান জেলার ৮৪ জন পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা জমা পড়েছে। তবে এই পর্যায়ে অবাক করা তথ্য সামনে এসেছে মুর্শিদাবাদে। সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার পড়ুয়া দু’বার করে এই ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অর্থ পেয়েছেন। সামগ্রিক এই অনিয়ম নিয়ে এদিন নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। হাজির ছিলেন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব বিনোদ কুমার, রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমার। কয়েকজন জেলাশাসকও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে স্কুল শিক্ষা দপ্তর ও রাজ্য পুলিস। তাতে ‘ট্যাব’ কেনার টাকার নয়ছয়ের ঘটনায় প্রধান শিক্ষকদের একাংশের জড়িত থাকার উল্লেখ রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী ইতিমধ্যেই ৩৪ জন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিসকে।  


    নবান্ন সূত্রের খবর, প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলা সেই বৈঠকে স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব— অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে হবে। দোষ প্রমাণ হলে নিতে হবে উপযুক্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপ। পুলিসকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী দিনে যাতে এমন কোনও ঘটনা না ঘটে, তার জন্য ‘ফুল প্রুফ সিস্টেম’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠন অবশ্য এব্যাপারে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছে স্কুল শিক্ষা সচিবকে। সেখানে রাজ্য, জেলা এবং এসআই অফিস পর্যায়ের অফিসেই অনিয়ম হওয়ার ইঙ্গিত করা হয়েছে। অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস এর দাবি, বিষয়টি সম্পর্কে জেলা পরিদর্শকদের আগেই অবহিত করা হয়েছিল। স্কুল শিক্ষা দপ্তরের দাবি, এখনও পর্যন্ত ছ’টি জেলায় ৩০৯ জন পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ‘ট্যাব’ কেনার টাকা ঢোকেনি। তবে এখনও অনেক জেলা থেকে পড়ুয়াদের এই ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের টাকা না আসার খবর আসছে প্রশাসনের কাছে।


    তবে মুর্শিদাবাদের অনিয়মের খবর সবথেকে অভিনব। ওই জেলার মোট ৪ হাজার ৮৪১ জন শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্টে দু’বার ‘ট্যাব’ কেনার টাকা ঢুকেছে। ফলে বাড়তি খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা। ওই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত চেয়ে ১৭টি ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে চিঠি পাঠিয়েছেন স্কুল পরিদর্শক অমর কুমার শীল। একজন ছাত্র কী করে ‘ডাবল’ অনুদান পেল? সেই প্রশ্ন উঠছে। একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, সাধারণ ও বৃত্তিমূলক—উভয় শাখার পড়ুয়ারাই ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব কেনার টাকা পায়। সে জন্য আলাদা আলাদা পোর্টালে ছাত্রছাত্রীদের নাম তুলতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। তা করতে গিয়ে গণ্ডগোল হতে পারে।
  • Link to this news (বর্তমান)