দু’চাকার শাসনে কলকাতার রাজপথ, প্রতিদিন পথে নামছে ২৩৩টি নয়া বাইক-স্কুটার, বাড়ছে যানজট
বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ হলেই এক্সিলেটর মুড়িয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়। অফিস টাইমে তো বটেই, দিনের বাকি সময়েও রাস্তায় এই মোডে একপ্রকার দাপিয়ে বেড়ায় বাইক-স্কুটার। শহরবাসীর কাছে এ দৃশ্য বড্ড চেনা। সেই চেনা দৃশ্যে সিলমোহর দিল লালবাজারের রিপোর্টও। তাতে বলা হয়েছে, অফিস টাইমে যানজট ও নিত্যযাত্রীদের তীব্র ভোগান্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে উল্কাগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া দ্বিচক্র যান। দোসর ছোট গাড়ি।
যানবাহন বাড়ছে, এটা হল রিপোর্টের সারাংশ। বিস্তারিত তথ্য কিন্তু চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতোই। কলকাতার জায়গা বাড়েনি এক ফোঁটাও, কিন্তু যে হারে গাড়ি ও বাইক-স্কুটার বেড়েছে তাতে নাভিশ্বাস উঠছে মহানগরীর রাস্তার। রিপোর্ট বলছে শেষ এক বছরে কলকাতায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার। তার মধ্যে শুধুমাত্র নতুন বাইক-স্কুটারের সংখ্যাই প্রায় ৮৫ হাজার। চোখ টানার মতো তথ্য হল, প্রতিদিন গড়ে ২৩৩টি নতুন বাইক-স্কুটার ‘রাস্তা-দখল’ করছে।
শহরে কত যানবাহন চলাচল করে, কোন কোন সময়ে যানজট হয়, কোন এলাকায় কতক্ষণ লম্বা জ্যামে নাকাল হচ্ছেন মানুষ— এইসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বিশেষ সমীক্ষা করে কলকাতা পুলিস। তাতেই উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে শহরে সব ধরনের গাড়ি মিলিয়ে মোট ২২ লক্ষ ২৯ হাজার ৫৯৪টি গাড়ি চলাচল করছে। এছাড়াও ভিন রাজ্যে নথিভুক্ত কিছু পণ্যবাহী গাড়ি ও যাত্রীবোঝাই গাড়ি শহরে প্রবেশ করে। লালবাজারের তথ্য বলছে, গত বছর শহরে যানবাহনের সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ ৯৯ হাজার ৭১৫টি। অর্থাৎ, এক বছরে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার। অথচ, জায়গা অপরিবর্তিত। ভাঙড় ডিভিশন বাদ দিলে মূল কলকাতা প্রায় ৩২০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত। তা কিন্তু বহরে এক ইঞ্চিও বাড়েনি। ফলে শহরে যানজট আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা পুলিসের। সকাল ও বিকেলের অফিস টাইমে গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যালগুলিতে ‘স্টপেজ টাইম’ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে শহরবাসী। বেহালার বাসিন্দা সুব্রত সাহার কথায়, ‘বছর চারেক আগে মোমিনপুর ক্রসিংয়ে ২৫-৩০ সেকেন্ডের বেশি স্টপেজ টাইম থাকত না। অফিস যাওয়ার পথে হাজরা, রাসবিহারী ও গড়িয়াহাট মোড়ে সবচেয়ে বেশি ৫০-৫৬ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হতো। এখন এই বড় মোড়গুলিতেই প্রায় ১২০ সেকেন্ডের বেশি দাঁড়াতে হচ্ছে অফিস টাইমে।’ অর্থাৎ, প্রতি সিগন্যালে অপেক্ষার সময় বেড়েছে প্রায় মিনিটখানেক করে। সেই টাইমে দীর্ঘ হচ্ছে ‘টেইল’। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, যানজটের হাত থেকে মুক্তি দিতে সিগন্যাল ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হচ্ছে। অপটিক্যাল ফাইবার, স্মার্ট সিগন্যালিং সিস্টেমের মতো প্রযুক্তি নিয়ে আসা হয়েছে। গুগলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে করে ন্যূনতম ‘স্টপেজ টাইম’ রাখার ব্যাপারেও সচেষ্ট লালবাজার।
কিন্তু এরপরেও রাতের ঘুম উড়েছে ট্রাফিক বিভাগের। কারণ, বাইক-স্কুটারচালকদের মধ্যেই সিগন্যাল ভাঙার প্রবণতা সর্বাধিক। আলো সবুজ হোক বা লাল, ডান হাত মুড়িয়েই চলেছেন তাঁরা।