• রাজকীয় শোভাযাত্রার সাক্ষী থাকতে অজস্র মানুষের ঢল
    বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: সোমবার সন্ধ্যা গড়াতেই জনসমুদ্র গঙ্গাপাড়ের চন্দননগরে। সকালে বিসর্জনের ব্যথা ছিল। সন্ধ্যার শোভাযাত্রার জাঁকজমক তা বদলে দিল উল্লাসে। শোভাযাত্রায় অংশ নিল হাজার হাজার মানুষ। ভিড়ে ঠাসা রাজপথ ধরে রাজকীয় শোভাযাত্রা। হাজার হাজার দর্শকের চোখের সামনে আলোর মায়াজাল-কখনও তৈরি করল ডিজনিল্যান্ডের চরিত্র কখনও সার্কাসের তরুণী জিমন্যাস্ট আলোর শরীর নিয়ে এসে চমকে দিয়ে গেল আবালবৃদ্ধকে। রাতে শহর কার্যত ভেঙে পড়েছিল। শুধু শহর বলা ভুল। জেলা তথা জেলার বাইরে থেকেও কাতারে কাতারে মানুষ এসেছিল অনুষ্ঠান দেখতে। ২৪০টিরও বেশি লরির সারি শেষ হতে হতে রাত গড়িয়ে ভোর। তবে উৎসাহী মানুষ নিজের জায়গা ছাড়েনি। 


    শোভাযাত্রা ঠিকভাবে হওয়ায় স্বস্তির শ্বাস পুলিস ও প্রশাসনের। সোমবার রাতে চন্দননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, সবই সুষ্ঠুভাবে চলছে। সেটা খুবই আনন্দের। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে খুশি চন্দননগরের কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ। রাতে তিনি বলেন, ‘সব সুষ্ঠুভাবে চলছে। প্রচুর মানুষ এসেছেন, এই ছবি প্রত্যাশিতই ছিল। এবার শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারী ক্লাবের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে শোভাযাত্রাও আড়েবহরে বেড়েছে।’ বিকেল থেকে চন্দননগরে গঙ্গার ধারে বসেছিলেন মিতালি দাস। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে পোলবা থেকে এসেছেন। বলেন, ‘যত রাত পর্যন্ত শোভাযাত্রা চলবে, তত রাত পর্যন্তই থাকব। বছরে একবারই তো এমন দৃশ্য দেখা যায়। আগেভাগে এসেছি যাতে জুতসই জায়গা নিয়ে বসতে পারি।’ কানাডা থেকে একদল পর্যটক সম্প্রতি চন্দননগরে এসেছিলেন। তাঁরা আলোর শোভাযাত্রা কথা শুনে থেকে যান। তাঁদেরও দেখা গিয়েছে। ছিলেন গাজোলের বাসিন্দা পার্থ দত্ত। একাই এসেছেন। বলেন, ‘আলোর অলঙ্করণের কাজ করি। চন্দননগরের আলোকসজ্জার গতিপ্রকৃতি বোঝা যায় শোভাযাত্রা থেকে। তাই এসেছি। রথ দেখা ও কলা বেচা দু’টোই একসঙ্গে হয়ে যাচ্ছে।’


    সোমবার চন্দননগরের সকাল ছিল রীতি রেওয়াজে ঘেরা। রানির ঘাট সহ একাধিক ঘাটে মিছিল করে বিসর্জন হয়েছে। তেঁতুলতলায় পুরুষরা নারী সেজে সাবেক রীতি মেনে দেবীকে বরণ করেছেন। তারপর সার বেঁধে প্রতিমা এসেছে। সঙ্গে এসেছে বহু মানুষ। বিদায়বেলায় সকলের চোখে জল। ছবিটা বদলালো সন্ধ্যায়। তখন শহর ঐতিহ্যের আর শিল্পের। শোভাযাত্রা শুরু হয়। একটি করে লরি এসেছে আর জনতা উল্লাস প্রকাশ করেছে দেখে। কখনও আলোর মায়ায় মুগ্ধ হয়ে নীরবও থেকেছে। রাত জেগেছে চন্দননগর-কৃত্রিম আলোর মায়া মেখে, ভোরের সূর্য দেখার আগে পর্যন্ত। 
  • Link to this news (বর্তমান)