সুদীপ্ত কুণ্ডু, হাওড়া: ট্রেন থেকে হাওড়া স্টেশনে নেমে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ যাত্রী কলকাতা সহ অন্যান্য জায়গায় যাতায়াত করেন। তাঁদের সুবিধার্থে হাওড়া স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সের সামনে ‘যাত্রীসাথী’ অ্যাপ ক্যাবের কাউন্টার রয়েছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চালু হওয়া এই অ্যাপ ক্যাব পরিষেবার চাহিদাও যথেষ্ট। ‘যাত্রীসাথী’ কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের লম্বা লাইন লেগে থাকে সারাক্ষণ। কিন্তু অভিযোগ, দালালদের খপ্পরে পড়ে ঠকতে হচ্ছে অনেককে। স্টেশন থেকে যাত্রীরা বেরলেই ভুল বুঝিয়ে তাঁদের অনেককে বেআইনিভাবে পার্কিং করে রাখা ক্যাব ও ট্যাক্সির কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট ভাড়া না জানা অনেকে অতিরিক্ত খরচ দিয়ে সেই ট্যাক্সি বা ক্যাব ভাড়া করছেন।
ভাড়া নিয়ে বচসার পাশাপাশি বেসরকারি অ্যাপ ক্যাবের বাড়তি চাহিদা—দুই চাপে জেরবার যাত্রীদের ন্যায্য ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে রাজ্য পরিবহণ ও তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে চালু হয়েছিল ‘যাত্রীসাথী’ পরিষেবা। হাওড়া স্টেশনের পাশাপাশি শিয়ালদহ, কলকাতা, সাঁতরাগাছি স্টেশন ও কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এই পরিষেবা চালু হয়। বর্তমানে কয়েক হাজার হলুদ ও নীল-সাদা ট্যাক্সির চালক এই সরকারি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। স্মার্টফোন নেই, এমন যাত্রীদের যাতে ক্যাব পেতে সমস্যা না হয়, সেজন্য হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের বাইরে ‘যাত্রীসাথী’ কাউন্টারে হাওড়া সিটি পুলিসের তরফে ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কার্যত পুলিসের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এক শ্রেণির দালাল ও অসাধু কারবারি। এদের দৌরাত্ম্যে বহু যাত্রী যে সরকারি ক্যাবের কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছতেই পারছেন না, মেনে নিচ্ছেন এখানকার ভলান্টিয়ারদের একাংশ।
কীভাবে এই দালালরা যাত্রীদের তাদের গাড়িতে উঠতে রাজি করাচ্ছে? জানা গিয়েছে, যাত্রীরা নতুন কমপ্লেক্সের বাইরে এলেই তাঁদের পাকড়াও করা হচ্ছে। কোথায় যাবেন জেনে নিয়ে প্রথমে তুলনামূলক কম ভাড়ার টোপ দেওয়া হচ্ছে। তারপর যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বেশ খানিকটা দূরে বেসরকারি ক্যাব ও ট্যাক্সির কাছে। সেখানে যাত্রীর সঙ্গে নতুন করে দরদাম শুরু হচ্ছে ভাড়া নিয়ে। ভারী ব্যাগ নিয়ে আবার অনেকটা হাঁটতে হবে ভেবে নিরুপায় বহু যাত্রী বর্ধিত ভাড়াতেই রাজি হয়ে যাচ্ছেন। এসব ট্যাক্সি চালকের থেকে যাত্রী পিছু কমিশন পাচ্ছে দালালরা।
সোমবার সকালে হাওড়া স্টেশন থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত ট্যাক্সি খুঁজতে গিয়ে দালালের চক্করে পড়েছিলেন শান্তিময় চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। শান্তিময়বাবু বলেন, ‘গাড়ি লাগবে কি না জানতে চেয়ে এরা যেভাবে হামলে পড়ছে, তাতে সরকারি ক্যাব পর্যন্ত তো কেউ যেতে পারবে না। আমাকে তো ২০০-২৫০ টাকা বলে ডেকে নিয়ে গিয়ে ৪০০ টাকা চাইল। শেষে যাত্রীসাথী কাউন্টার থেকে ২৪৫ টাকায় গাড়ি বুক করলাম।’ কাউন্টারে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিসের এক আধিকারিকের কথায়, ‘সাধারণ মানুষ যাতে সহজে সরকারি অ্যাপ ক্যাব বুক করতে পারেন, তার জন্যই ভলান্টিয়াররা রয়েছেন। অসাধু দালাল চক্র রুখতে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’