• মমতার বাংলার বাড়ি প্রকল্প এবার পাহাড়েও? পর্ষদের সব কাজে নজরদারি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর
    বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • দেবাঞ্জন দাস, দার্জিলিং: রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ পাহাড় কি এবার ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের আওতায় আসছে? আজ, মঙ্গলবার গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) এবং জনগোষ্ঠী ভিত্তিক উন্নয়ন পর্ষদগুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের প্রাক্কালে এই জল্পনা পাহাড়জুড়ে। সূত্রের খবর, ‘বাংলার বাড়ি’ কীভাবে পাহাড়ে রূপায়িত হবে, কে বা কারা হবে তার নোডাল এজেন্সি, সে সংক্রান্ত রূপরেখা মুখ্যমন্ত্রী চূড়ান্ত করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আবাস যোজনার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা।


    রাজ্যের কোষাগারের অর্থে অন্যান্য জেলার মতো দার্জিলিংয়েও আবাস যোজনার কাজ শুরু করিয়েছেন মমতা। নবান্ন সূত্রের খবর, গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী, পাহাড় বাদ দিয়ে শুধুমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকায় ২৪ হাজারের কিছু বেশি বাড়িতে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। সমীক্ষার পর ৪ হাজার ৩১৩টি আবেদন বাতিলও হয়েছে। তাহলে দার্জিলিং আর কালিম্পংয়ের পাহাড়ি এলাকায় তা হয়নি কেন? ভুক্তভোগীরা জানেন, এখানেও কেন্দ্রের বঞ্চনা আর পদ্মপার্টির প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি সমতলের মতোই বিরাজমান। আবাস যোজনায় বাংলার বরাদ্দ দীর্ঘদিন বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। অথচ পাহাড়ে বিজেপির প্রচার—সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাবে কেন্দ্র। পাহাড়ে ৪৫ হাজার বাড়ি হবে, এমন প্রচারপত্রের পাশাপাশি কোন জেলায় কত বাড়ি হবে, তার হিসেব দিয়ে প্রচারও শুরু হয় গত লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে। কিন্তু কেন্দ্রের সেই অর্থ এখনও এসে পৌঁছয়নি পাহাড়ে।


    এই আবর্তে রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পাহাড়ের গৃহহীন বাসিন্দাদের কাছে বাংলার বাড়ি পৌঁছে দিতে তৎপর হয়েছে খোদ নবান্ন। বঞ্চিত সমতল আর বঞ্চিত পাহাড়—দুই প্রান্তের বঞ্চনাকে নিজেদের কোষাগারের ভরসায় মেটাতে উদ্যোগী স্বয়ং মমতাও। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সমতল যতটা আদরের, ঠিক ততটাই প্রিয় পাহাড়। বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তাঁর ব্রত। এই বিষয়ে তিনি যেমন নির্দেশ দেবেন, সেরকমই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


    পাহাড়ের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রান্তিক মানুষের কাছে দ্রুত উন্নয়ন পৌঁছে দিতে এখনও পর্যন্ত ১৭টি পর্ষদ গড়া হয়েছে। পাহাড়ের মানুষের কথা ভেবে পর্ষদগুলির কাছে পর্যাপ্ত অর্থও পৌঁছে দিয়েছে নবান্ন। গৃহহীনদের বাড়ি, শৌচাগার, স্কুল ভবন এবং কমিউনিটি সেন্টার তৈরির মতো কাজ শুরু করে পর্ষদগুলি। কিন্তু যাচাই করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ নবান্নের। পাহাড়ের সিংহভাগ উন্নয়ন পর্ষদ অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের অধীনে। সেই দপ্তর সূত্রে খবর, পর্ষদগুলির এক শ্রেণির কর্তা সাধারণের গৃহ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ অর্থ নয়ছয় করেছে বলে বিস্তর অভিযোগ এসেছে। সেই টাকায় কেউ শিলিগুড়িতে শপিং মলে দোকান কিনেছে, কেউ বানিয়েছে সাজানো গোছানো বাড়ি, আবার কেউ কিনেছে এসইউভি। বিষয়গুলি সামনে আসায় নবান্ন সিদ্ধান্ত নেয়, উন্নয়ন পর্ষদের সব কাজেই ব্যবহার করতে হবে জিও ট্যাগ, যাতে কাজের অস্তিত্ব যাচাই করা যায়। এতে অবশ্য গোঁসা হয় ওই অংশের পর্ষদ কর্তাদের। অভিযোগ, গত লোকসভা নির্বাচনে সেই অযৌক্তিক ক্ষোভকে হাতিয়ার করেই রাজ্য সরকার বিরোধী প্রচার চালিয়েছিল পদ্মশিবির। তবে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে জিও ট্যাগে এখন অবিচল নবান্ন।
  • Link to this news (বর্তমান)