শহরের মধ্যে দু’টি রেলক্রসিং, গেট পড়লেই জনজীবন স্তব্ধ রানাঘাটে
বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: নদীয়া জেলার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর রানাঘাট। মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। শহরটি ভাগাভাগি হয়েছে পূর্ব- পশ্চিমে। থানা, আদালত থেকে মহকুমা অফিসের কার্যালয়—সবই পশ্চিমপাড়ে। একাধিক প্রয়োজনীয় কাজ সারতে যেতে হয় রেললাইন টপকে। তাও আবার জোড়া রেল লাইন, জোড়া রেলওয়ে ক্রসিং। স্বভাবতই দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে গলদঘর্ম অবস্থা হতে হয় শহরবাসীকে। এ এক ঘোরতর সমস্যা। মোকাবিলায় রেল থেকে শুরু স্থানীয় প্রশাসন চরম উদাসীন বলে অভিযোগ। শহরবাসীর দাবি, রানাঘাটে আগের চেয়ে জনসংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ি-বাইকের সংখ্যা ততোধিক বেড়েছে। শহরের ভিতর পর পর দু’টি রেল ক্রসিংয়ের দরুণ কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় জনজীবন। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে দু’টি উপায়ে। এক, উড়ালপুল। দুই, ভূগর্ভস্থ পথ। দীর্ঘদিন ধরেই এই দু’টি দাবি তুলে আসছেন শহরবাসী। কিন্তু হুঁশ নেই কারও। উল্টে রাজনীতির তাল ঠোকাঠুকি অব্যাহত।
শিয়ালদ মেইন লাইনের সঙ্গে যুক্ত রানাঘাট জংশন। এখান দিয়ে গেদে, কৃষ্ণনগর হয়ে বহরমপুর ও শান্তিপুর যাওয়ার লাইন পাতা। আবার রানাঘাট থেকে পৃথক রেললাইন যুক্ত করেছে বনগাঁকেও। স্বাভাবিক কারণেই দু’টি রেলগেট রয়েছে শহরের মধ্যে। একটি রথতলা রেলগেট। অন্যটি চাবিগেট। সেই সঙ্গে রয়েছে কারশেডও। একবার রেলগেটে আটকা পড়লে টানা আধঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেই জট কাটতে আরও ১৫-২০ মিনিট। রানাঘাটের পূর্ব পাড়ে ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে গাংনাপুর, নোকাড়ি, সীমান্তের দত্তপুলিয়া সহ বিস্তীর্ণ অংশ। আর এই অংশের মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা রেললাইনের পশ্চিম পাড়ে আনুলিয়ায় অবস্থিত রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল। ফলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও রেলগেট পেরিয়ে যাওয়া দুরূহ। স্বভাবতই অনেক রোগীর অবস্থার অবনতি হয় পথমধ্যেই। প্রসূতিদের প্রসব যন্ত্রণা উঠলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির তৈরি হয়। কথা হচ্ছিল অ্যাম্বুলেন্স চালক অরুণ ব্রহ্মের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘ধানতলা থেকে আমাদের নিয়মিত রোগী নিয়ে আসতে হয় রানাঘাট হাসপাতালে। রেলগেটে একবার আটকা পড়লে রোগীর জীবন নিয়ে যমে-মানুষে টানাটানি শুরু হয়ে যায়। রেলগেট উঠলেও যানজট। হাসপাতালে পৌঁছতে কালঘাম ছুটে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র আন্ডার পাস বা উড়ালপুল।’
কিন্তু কে করবে? এই প্রশ্নে দায় ঠেলাঠেলি চলছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির মধ্যে। স্থানীয় বিধায়ক এবং সাংসদ বিজেপির। দু’জনে সদর্থক উদ্যোগ নিলে রানাঘাটের যান-যন্ত্রণা মিটতে পারে বলে মত শহরবাসীর। রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘স্টেশন সংলগ্ন একটি ভূগর্ভস্থ পথ রয়েছে। তবে, সেটি হেঁটে যাতায়াতের জন্য। যান চলাচলে পথটি উপযুক্ত করে তুলতে অ্যাপ্রোচ রোডের প্রয়োজন। রেলকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের সহযোগিতা মিলছে না।’ বিজেপি বিধায়কের এই অভিযোগ উড়িয়ে রানাঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘ডাহা মিথ্যা কথা বলছে বিজেপি। শহরের সমস্যা মেটার পদক্ষেপ নেওয়া হলে আমাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাই করা হয়নি। রেল যেদিন আমাদের সাহায্য চাইবে, সেদিনই করতে রাজি।’ -নিজস্ব চিত্র