• নিঃসন্তান বিদেশি দম্পতির  খোঁজ পেতে ফেসবুক গ্রুপ!   শিশু বিক্রি চক্রের অভিনব ছক, তদন্তে মিলল তথ্য
    বর্তমান | ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটকে ব্যবহার করে বিদেশের নিঃসন্তান দম্পতিদের খোঁজ চালাচ্ছিল শিশু পাচারকাণ্ডে সিআইডির হাতে ধৃত দুই অভিযুক্ত। দত্তক নেওয়ার জন্য বিভিন্ন নামে ফেসবুকে খোলা একাধিক পেজ থেকে এই তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তবে অভিযুক্ত দম্পতি ‘খরিদ্দার’ হিসেবে কাউকে জুটিয়েছিল কি না, গ্রুপ ঘেঁটে তা জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের কাছে আসা খবর অনুযায়ী, বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কথাবার্তা চালাচ্ছিল। তাদের বিভিন্ন বিষয় যাচাই করে দেখছিল অভিযুক্তরা। মোটা টাকার লোভেই ইউরোপের দেশগুলি ছিল তাদের নজরে। সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের পরিকল্পনা ছিল বিদেশিদের জন্য আলাদা গ্রুপ তৈরি করা, যাতে এখানকার গ্রুপ মেম্বাররা সেটা জানতে না পারেন। একইসঙ্গে দু’দিনের এই শিশুটির মাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছিল, জানতে অভিযুক্তদের জেরা চলছে। পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে শিশু কাদের মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছত, তাই নিয়েও খোঁজখবর শুরু হয়েছে।


    সিআইডি’র পাতা ফাঁদে পা দিয়ে রবিবার ধরা পড়ে মানিক হালদার ও তার স্ত্রী মুকুল সরকার। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে জেনেছেন, হরিদেবপুরে যে বাড়িতে তারা থাকত, সেখানে বিভিন্ন সময়ে সদ্যোজাত শিশু সন্তানকে নিয়ে এসে রাখা হতো। দু’-একদিনের মধ্যে তাদের হাতবদল করা হতো। তবে খুব বেশিদিন বাচ্চা সেখানে রাখা হতো না। কলকাতা সহ ভিন রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিংহোমের আয়া ও নার্সের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল দুই অভিযুক্তের। তাঁদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিত কোনও ‘অবৈধ’ সন্তানের জন্ম হয়েছে কি না। হাসপাতালের কর্মীদের মাধ্যমেই এই সমস্ত শিশুকে তারা সংগ্রহ করত। এই কাজে যুক্ত নার্সিংহোম ও হাসপাতালগুলির নাম তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যেই দুই অভিযুক্তের মোবাইল ঘেঁটে ভিন রাজ্যের বেশ কয়েকজন দালালের নাম পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাদের সঙ্গে শিশু কেনাবেচা নিয়ে একাধিক মেসেজও পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। যে শিশুটি উদ্ধার হয়েছে, সেটি কোন এজেন্ট ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, সেটা মেসেজ ঘেঁটেই জানতে পারছেন তদন্তকারীরা। তদন্তে উঠে আসছে, অভিযুক্তরা বিভিন্ন আইভিএফ সেন্টারে কর্মরত আয়াদের মাধ্যমে সেখানে আসা নিঃসন্তান দম্পতিদের বিষয়ে তথ্য জোগাড় করত। তারপর খোঁজা হতো সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের কোনও অ্যাকাউন্ট রয়েছে কি না। সেখান থেকেই তাঁদের সঙ্গে অভিযুক্ত দম্পতি যোগাযোগ করত বলে জানা যাচ্ছে। পুলিসের জালে ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে শিশু নিতে আগ্রহী নিঃসন্তান দম্পতিদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে বলা হতো। এমনকী শিশুকে হস্তান্তর করার সময়ও বারবার স্থান বদলে ফেলত। 


    তদন্তকারীরা জেনেছেন, শিশু বিক্রি করে পাওয়া পেমেন্ট নগদের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও অভিযুক্তদের কাছে এসেছে। সেই সূত্র ধরে জানার চেষ্টা হচ্ছে, কারা কারা তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে শিশু কিনেছিল।  -ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)