রাজ্যের কাছে শিল্পপতি পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের টিসিজি গোষ্ঠীর যে বকেয়া আছে, অবিলম্বে সেই সংক্রান্ত দু’হাজার কোটি টাকা কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ। গত বছর সুপ্রিম কোর্টের তিন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি বেঞ্চ সালিশি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্যকে ওই পরিমাণ বকেয়া অর্থ মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। আজ সেই মামলায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, অবিলম্বে ওই অর্থ দিতে হবে রাজ্যকে। প্রধান বিচারপতি হিসাবে সঞ্জীব খন্না দায়িত্ব নেওয়ার পরে রাজ্য সংক্রান্ত এটি ছিল প্রথম মামলা। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই রায়ের ফলে রাজ্যের ঘাড়ে আরও বেশ কিছুটা আর্থিক বোঝা চাপল।
হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস বা এইচপিএল ছিল পূর্ণেন্দুর চ্যাটার্জি গোষ্ঠী (টিসিজি) ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রকল্প। সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের পরে প্রায় এক দশক আগে সংস্থাটি রাশ হাতে নেয় টিসিজি। তখন রুগ্ণ এইচপিএলের পুনরুজ্জীবনের শর্ত হিসেবে ঠিক হয়, টিসিজি-কে দফায় দফায় মোট ৩২৮৫.৪৭ কোটি টাকা দেবে রাজ্য, বা ১৯ বছর ধরে আর্থিক সহায়তা দেবে। ঠিক হয়, দুটোর মধ্যে যেটা আগে হবে, সেটাই দেবে রাজ্য। অর্থাৎ, দফায় দফায় মোট ৩২৮৫.৪৭ কোটি টাকা ১৯ বছরের আগেই দেওয়া হয়ে গেলে আর তত দিন ধরে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে না। সেই সময় চালু ভ্যাটের নিরিখে ওই আর্থিক সুবিধার হিসাব কষা হয়েছিল। ২০১৭-র ৩০ জুন পর্যন্ত অঙ্কটা দাঁড়ায় ৩১৭.১৩ কোটি টাকা। কিন্তু অভিযোগ, ওই বছর ১ জুলাই জিএসটি চালুর পরে টিসিজি-কে আর টাকা দেয়নি রাজ্য। টিসিজি-র অধীন এইচপিএলের প্রোমোটার সংস্থা এসেক্সের দাবি, নতুন কর ব্যবস্থার সঙ্গে ওই সুবিধার শর্তের যোগ নেই। চুক্তি অনুসারেই তা তাদের প্রাপ্য।
সালিশি আদালতে সুপ্রিম কোর্টের তিন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বেঞ্চ (যাঁদের দু’জন দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি) গত সেপ্টেম্বরে এসেক্সের দাবিকেই মান্যতা দেয়। যার নির্যাস, বাকি প্রাপ্য ২৯৬৮.৩৩ কোটি টাকা রাজ্য দেবে এইচপিএল-কে। সঙ্গে ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে (যখন থেকে আর্থিক সুবিধা বণ্টন বন্ধ করা হয়েছে) যত দিন সংস্থার তা প্রাপ্য, সেই বকেয়ার উপরে প্রতি তিন মাসে ৬% সুদও দিতে হবে। মামলার খরচ বাবদ রাজ্যের থেকে আরও ৬.৫৫ কোটি টাকা পাবে এসেক্স।