• মেয়াদ উত্তীর্ণ, লজঝড়ে বাসই ছুটছে স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে, কড়া পদক্ষেপের ভাবনা
    বর্তমান | ১৩ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: রানাঘাট শহরে বেসরকারি স্কুলগুলো স্কুলবাস হিসেবে যেসব বাসগুলি ব্যবহার করছে সেগুলি আদৌ নিরাপদ তো। প্রশ্ন উঠছে মানুষের মনে। রানাঘাট শহর এবং আশেপাশের কয়েক বর্গ কিলোমিটারের বৃত্তের মধ্যেই রয়েছে অন্তত হাফ ডজন বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। পড়াশোনা থেকে শুরু করে ইউনিফর্ম, সমস্ত ক্ষেত্রে ‘ডিসিপ্লিন’-ই শেষ কথা এইসব স্কুলগুলির। পুরোদস্তুর সাহেবি কেতায় চলে এইসব স্কুল। কিন্তু স্কুলবাসের ক্ষেত্রেও কি সেই ডিসিপ্লিন মেনে চলে স্কুলগুলি। কোনও স্কুলের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে, কেউ আবার কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে অন্য মালিকের বাস চালায়। বহু ব্যক্তিগত পুল কার সার্ভিসও রয়েছে। 


    দেখা গিয়েছে, স্কুলের সার্ভিস দেয় এরকম বহু বাস অথবা পুল কারের অবস্থাই বেশ শোচনীয়। এককথায় অনেক গাড়ির এক্কেবারে লজঝড়ে অবস্থা। উপর উপর নতুন রংয়ের প্রলেপ দেখে তার বিন্দুবিসর্গ বোঝার উপায় নেই। এরমধ্যে অনেক বাস অথবা পুল কারের নেই পলিউশন সার্টিফিকেট। কোনও গাড়ির ইন্সিওরেন্স নবীকরণ হয়নি বহুকাল। শুধু তাই নয়, একগুচ্ছ এরকম গাড়ির হদিশও পাওয়া গিয়েছে, যাদের ফিটনেস সার্টিফিকেট পর্যন্ত নেই। পরিবহণের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে বহু আগেই। তা সত্ত্বেও, বহাল তবিয়তে স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে শহরের অভ্যন্তরে অথবা জাতীয় সড়কে দৌড়ে বেড়াচ্ছে বাস আর গাড়িগুলি! অর্থাৎ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা এর থেকেই আন্দাজ করা যায়। যেমন একটি বেসরকারি স্কুল বাস WB51A892* প্রতিদিন রানাঘাট শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে খুদে পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছনোর মাধ্যম। উপর থেকে ঝাঁ চকচকে বাসটির উপরে বড় বড় করে লেখা রয়েছে স্কুলের নামও। অথচ দেখা যাচ্ছে, সেই বাসের পারমিট চলতি বছর আগাস্ট মাসে শেষ হয়ে গিয়েছে। পলিউশন এবং ইনসিওরেন্স সার্টিফিকেট নেই। ২০২১ সালে বাসটির ফিটনেস মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ যাত্রী পরিবহণের অযোগ্য বাসটি দিব্যি শিশুদের নিয়ে যাচ্ছে। বলাই বাহুল্য, দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোনওদিন। 


    তবে বিষয়টি ইতিমধ্যেই নজরে এসেছে পুলিসের। বেসরকারি স্কুলগুলিতে পরিষেবা দেয় এরকম একগুচ্ছ বাস ট্রাফিক পুলিসের আতসকাচের তলায়। সূত্রের খবর, মেয়াদ উত্তীর্ণ অথবা কাগজপত্র ঠিক নেই এমন বাস এবং পুল কারগুলির তালিকা তৈরি হতে পারে। তারপর কড়া পদক্ষেপ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। ট্রাফিকের এক কর্তা বলেন, আমরা নিশ্চয়ই এই ধরনের বাস চিহ্নিত করার কাজ করব। সাধারণ যাত্রী হোক বা স্কুল পড়ুয়া, তাদের নিরাপত্তা সবার আগে। 


    বিষয়টি জানার পর আশঙ্কার সুরে এক বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ার অভিভাবক বিপ্লব বিশ্বাস (নাম পরিবর্তিত) বলেন, হঠাৎ সেদিন এম-পরিবহণে খেয়াল করলাম বিষয়টা। মেয়াদ উত্তীর্ণ একটা বাস প্রতিদিন এতগুলো স্কুল পড়ুয়াকে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ উপর থেকে বাসটি দেখলে বোঝার উপায় নেই! এটা জানার পর ছেলেকে ওই বাসে পাঠানো জেনেবুঝে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
  • Link to this news (বর্তমান)