• ব্রিজ ও জলপ্রকল্পের কানঘেসে বেপরওয়া বালি লুট পাণ্ডবেশ্বরে
    বর্তমান | ১৩ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পাণ্ডবেশ্বর: রেলব্রিজ, জাতীয় সড়কের উপর গুরুত্বপূর্ণ সেতুর নীচেই বেপরওয়া ভাবে বালি লুট চলছে পাণ্ডবেশ্বরে। দুটি সেতুর মাঝে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের বৃহৎ জল প্রকল্প। তার অদূরে দিনে দুপুরে বেপরওয়া ভাবে বালি লুট করছে মাফিয়ারা। প্রতি নিয়ত পিপড়ের সারির মতো ট্রাক্টর গিয়ে নদী থেকে বালি তুলে এনে তা বিভিন্ন জায়গায় জমা করছে। সেখান থেকে পাচার হচ্ছে বড় গাড়িতে। যারজেরে দুর্বল হচ্ছে সেতু, বিপর্যস্ত হতে পারে জল প্রকল্প। তা সত্ত্বেও সবার চোখের সামনে চলছে কারবার। পাণ্ডবেশ্বরের শ্যামলা, কেন্দ্রা, বৈদ্যানাথপুর পঞ্চায়েতের কোন্দা এলাকাতেও এই ভাবে বালি লুটের রমরমা বলে অভিযোগ। বালি কারবারি নিয়ে বিরক্ত জামুড়িয়াও। সেখানে আবার ওভারলোডেড বালির লরির দাপটে সড়ক যন্ত্রণার নাকাল এলাকাবাসী। বর্ষাকালের পর্ব মিটতেই পশ্চিম বর্ধমান জুড়ে বেপরওয়া ভাবে শুরু হয়েছে বালি কারবার। যা নিয়ে মাফিয়া ও প্রভাবশালীদের মধ্যে শুরু হয়েছে রেষারেষিও।


    অতিরিক্ত জেলাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জলপ্রকল্প ও ব্রিজের পাশ দিয়ে কোন ভাবেই বালি তোলা যায়না। সম্পূর্ণ ভাবে এটি অবৈধ। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। 


    পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমকে পৃথক করেছে অজয় নদ। সেই অজয় নদই এখন হয়ে উঠেছে দুই জেলার একাংশ প্রভাবশালীদের করে কম্মে খাওয়ার জায়গায়। নদীতে জল নামতেই দুটি জেলায় বেপরওয়া ভাবে বালি লুটের অভিযোগ ওঠা শুরু হয়েছে। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ পাওয়া গেল দুটি জেলার সেতুবন্ধকারি ভীমগড়ের অজয় ব্রিজে। ব্রিজের একপাশে পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর অন্যপাশে বীরভূমের ভীমগড়। সেতু থেকে নদীর নিম্নভাগে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই অণ্ডাল সিউড়ি গুরুত্বপূর্ণ রেললাইনের উপর রেল সেতু। এই দুই সেতুর মাঝে জনসংস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর গড়ে তুলে ছিল জল প্রকল্প। দুটি সেতুর মাঝে বালি তোলা নিষিদ্ধ সেই জায়গাতেই পাইপের জাল বিছিয়ে নদী থেকে জল তোলার ব্যবস্থা করে তাঁরা। মঙ্গলবার দুপুরে সেই জায়গা থেকে বেপরওয়া ভাবে বালি লুট হতে দেখা গেল। একেবারে সিন্ডিকেটের আদলেই চলছে পরিকল্পিত বালি লুট। ট্রাক্টর যাওয়ার জন্য রাস্তা বানানো হয়েছে। কত ট্রাক্টর আসছে কেউ নজর রাখছে কিনা তা দেখার জন্য বালি মাফিয়াদের সতন্ত্র প্রহরী গাছতলায় বসে। এলাকার উপর নজরদারির পাশাপাশি কোন নম্বরের ট্রাক্টর কত টিপ করছে তাও হিসাব রাখছে সে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল দুটি জেলার বর্ডার হওয়ায় পুলিসের চেকপোষ্ট রয়েছে সেখানেই। তাও উর্দিধারিদের নজরে পড়েনি বিষয়টি। বালি লুটের জেরে জলপ্রকল্পে ক্ষতি হলে পাণ্ডবেশ্বরে জলের আকাল দেখা দেবে। সিপিএমের পাণ্ডবেশ্বর এরিয়া সম্পাদক সুভাষ বাউরি বলেন, পাণ্ডবেশ্বর জুড়ে বালি লুট চলছে। 


    একই ভাবে জামুড়িয়া থানার চুরুলিয়া ফাঁড়ির অন্তর্গত চিচুড়বিল, বীরকুন্টি, দেশেরমোহন এলাকাতে ওভারলোডেড দৈত্যাকার বালি বোঝাই লরির দাপাদাপি। নদীতে বহু মেশিন নামিয়ে বিপুল পরিমাণ বালি তুলে দেওয়া হচ্ছে। নদীর ভেজা বালিই গ্রামের রাস্তা ভেঙে ছুটছে চুরুলিয়া, জামুড়িয়ার উপর দিয়ে। বিজেপি ওবিসি মোর্চা জেলা সম্পাদক গোপী পাত্র বলেন, অন্য জেলার চালানে এখানে বালি তোলা হচ্ছে। রাস্তাঘাটের কোন অস্তিত্ব নেই। 
  • Link to this news (বর্তমান)