• সাইবার প্রতারণা! পাঁচটি অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি
    বর্তমান | ১৩ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা,  পুরুলিয়া: একদিনে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি সাইবার প্রতারণার অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় পাঁচটিরও বেশি থানা এলাকার বাসিন্দারা প্রতারণার অভিযোগ জমা করেছেন। সোমবার একই দিনে এত বিপুল সংখ্যক প্রতারণার অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছে। সাইবার প্রতারকদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিসের লাগাতার অভিযানের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। 


     পুরুলিয়া জেলার আড়ষা থানার রামজীবনপুর গ্রামের বাসিন্দা আদরী মাহাত। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হেঁসলা ঠেকাতে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন, তার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। আড়ষা থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। অন্যদিকে বাঘমুন্ডি থানার তুনতুড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুনীল ঘোষ। সুনীলবাবু বাঘমুন্ডি থানায় লিখিত অভিযোগে জানান,  গত সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। ওই মোবাইল নম্বরটি তাঁর বাবা হরেন ঘোষের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা রয়েছে। পরপর দু’দিনে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে দশ হাজার,  তারপর এক লক্ষ এবং পরে ৫১ হাজার ৮০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। পরে আবার অ্যাকাউন্টে ১২ হাজার টাকা ফেরত আসে। তিনি জানতে পারেন, প্রিয়াঙ্কা কুমারী নামে একজনের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা গিয়েছে। 


    অন্যদিকে হুড়া থানায় এলাকার বাসিন্দা শেখরচন্দ্র গড়াই। সোমবার থানাতে লিখিত অভিযোগ করে তিনি জানান, গত জুন মাসে তার অ্যাকাউন্ট থেকে এক লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা অনলাইন জালিয়াতি হয়েছে। ওই থানা এলাকারই বাসিন্দা প্রভাসচন্দ্র মাহাত। তাঁর বাড়ি নডিহা গ্রামে। তিনিও লিখিত অভিযোগ করে জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ তার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে ৫৭ হাজার ৪০০ টাকা অনলাইন জালিয়াতি হয়েছে। প্রথমে ২৫ হাজার এবং পরে প্রায় ৩২ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিয়েছে। অন্যদিকে বাঁকুড়া সদর থানা এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম মিদ্যা ঘোড়া থানাতে সোমবার লিখিত অভিযোগ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি হুড়া থানায় এলাকার মাগুরিয়া এলাকায় বসবাস করছেন। বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্মী পরিচয় দিয়ে গত জুলাই মাসে কেওয়াইসি আপডেট করার জন্য তাঁর কাছে ফোন আসে। তিনি ফোনে সব তথ্য জানান। তারপর দফায় দফায় মোট ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে। 


    অন্যদিকে, ঝালদা থানা এলাকার বাসিন্দা দীপা কুমারী। তিনি ওইদিনে ঝালদা থানাতে লিখিত অভিযোগ করে জানান, তাঁর জিএসটি পোর্টাল হ্যাক করে প্রায় ১৬ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জিএসটি দপ্তরেও তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তিনি লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর জিএসটি পোর্টালের ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে জানতে পারেন, চলতি বছরের মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কেউ তাঁর জিএসটি আগেই ফিলাপ করে রেখেছে। সেই সঙ্গে প্রায় ৫৯ লক্ষ আশি হাজার টাকার সামগ্রী এক্সপোর্ট করার জন্য তাঁর জিএসটি পোর্টাল ব্যবহার করে ‘ওয়ে বিল’ তৈরি করা হয়েছে ১৬ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকার। পুরুলিয়া থেকে ওই সামগ্রী পেট্রাপোল সীমান্তে পাঠানোর বিষয়  লেখা রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক ব্যক্তির নামেও লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন। অন্যদিকে ওইদিনই আবার পুরুলিয়া শহরের আমডিহা এলাকার বাসিন্দা অনুপকুমার চৌধুরী লিখিত অভিযোগ করে সদর থানাতে জানান,  একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী পরিচয় দিয়ে তাঁর কাছে ফোন আসে। কেওয়াইসি আপডেট করা না হলে তার অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা হবে বলে জানানো হয়। অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করার মেসেজও চলে আসে তাঁর কাছে। তারপর ওই নম্বরে ফোন করে নিজের প্যান নাম্বার জানান তিনি। তার কাছে একটি ভিডিও কলও আসে। তারপরেই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা কেটে নেয় তারা। 


     জেলাজুড়ে সাইবার প্রতারণা বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। সাইবার প্রতারকদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিসের আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
  • Link to this news (বর্তমান)