জীর্ণ ঘরে দিন গুজরান, নাম নেই ‘আবাস’ তালিকায়, ভবিষ্যতের চিন্তায় বৃদ্ধা
প্রতিদিন | ১৩ নভেম্বর ২০২৪
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: ভাঙাচোরা ইটের দেওয়াল। মাথায় অ্যাসবেস্টসের ছাউনি! সেটিও ভেঙে গিয়েছে। সূর্য ডুবলেই অন্ধকারে ঢেকে যায় বাড়ি। কয়েকবছর আগে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও, বিল পরিশোধ করতে না পারায় সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। মোমবাতিই ভরসা বৃদ্ধার। তবে তাও দেওয়া প্রতিবেশীদের। কেরোসিন তেল কেনারও আর্থিক সার্মথ্য নেই। এই রকম অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে দিন কাটাছেন অষ্টমী দিকপতি। তাঁর দাবি আবাস যোজনায় একটি বাড়ি। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে টাকাটা পেলে এই ঘরই সারাই করে ছেলেটাকে নিয়ে নিশ্চিন্তে একটু ঘুমোতে চাই।” কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, আবাস তালিকায় তাঁর নামই নেই। একটু থেমে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি তালিকায় আমার নাম নেই। তবুও অনেকবার বলেছি পঞ্চায়েতকে। যদি দয়া হয়!”
দাসপুর এক নম্বর ব্লকের কৃষ্ণপুর গ্রামে বাড়ি অষ্টমীদেবীর। স্বামী মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। সম্বল বলতে ওই বাস্তুভিটে টুকু। অষ্টমীদেবীর দুই ছেলে। বড় ছেলে গণেশ বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ছোট ছেলে কার্তিককে নিয়ে ওই ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকেন বৃদ্ধা। কার্তিক আবার মানসিক ভারসাম্যহীন।
ছেলের চিকিৎসা? সে তো স্বপ্ন। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে জেরবার তিনি। আর বাড়ি তো নয়, যেন ভুতুড়ে! বৃষ্টি হলেই ঘরময় জলকাদায় ভরে যায়। নড়বড়ে দরজা আছে তো জানালা নেই। একটি জানালা থাকলেও তাও নড়বড়ে। চারপাশ ফাঁকা। ঝড়ঝাপটা হলেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় মা-ছেলেকে।
এই তো কদিন আগে অতিবর্ষণ। তারপর ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র ঝাপটা সইতে হয়েছে তাঁদের। রোজগার বলতে ভিক্ষা আর রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মাসিক হাজার টাকা। আর রেশনের চাল, আটা। সকাল হলেই ভিক্ষেয় যেতে হয় অষ্টমীদেবীকে। কোনওরকমে আধপেটা হয়ে দিন গুজরান। তাঁর আক্ষেপ, পঞ্চায়েতের চোখে পড়ে না তার দুরাবস্থা। তিনি বলেন, “এই তো বাড়ি। কোনওরকমে রাতটা কাটাই। বৃষ্টি, ঝড় হলে কখনও এক কোনেও বসে থাকি বা অন্যের বাড়িতে যাই। যত ভাবনা এই ছেলেটাকে নিয়ে।”
উৎকণ্ঠায় অষ্টমীদেবী। প্রতিবেশী তাপসী দোলই, কল্যাণী দিকপতি বলেন, “ওঁদের কিছু নেই। ভিক্ষায় সংসার চলে। ছেলেটাতো ওইরকম! মোমবাতি কেনারও পয়সাটুকু নেই। এঁদের যদি সরকার না দেখে কাকে দেখবে? একটা বাড়ি তো ব্যবস্থা করা যায়।” অষ্টমীদেবীর পাশে দাঁড়াতে চান দাসপুর এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার পাত্র। তিনি বলেন, “অষ্টমী দিকপতির বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতকে বলেছি। যতরকমের সাহায্য করা যায় সবই করা হবে। পঞ্চায়েত প্রধানকে বিস্তারিত জানাতে বলেছি। আবাস যোজনার বিষয়টি দেখতে হবে। যদি সম্ভব হয় নিশ্চয়ই দেখা হবে।” মিলবে কি আবাস যোজনায় একটা বাড়ি? এই আশায় দিন কাটছে অষ্টমীদেবীর।