• বাংলার উপনির্বাচন মোটের উপর শান্তিপূর্ণ, কিছু অংশে বিক্ষিপ্ত গোলমাল, ভোটের হারে এগিয়ে তালড্যাংরা
    আনন্দবাজার | ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু গোলমাল ছাড়া মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটল রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৬৯.২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় (৭৫.২০ শতাংশ)। সবচেয়ে কম নৈহাটিতে (৬২.১০ শতাংশ)। কমিশনের কাছে বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ৩৪২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে বিজেপি শিবির থেকেই জমা পড়েছে ৬৬টি অভিযোগ। তৃণমূল পাঁচটি অভিযোগ জানিয়েছে। কংগ্রেস এবং সিপিএম উভয় শিবির থেকে তিনটি করে অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে বাস্তব চিত্র অনুসারে অল্পবিস্তর বচসা, গোলমাল ছাড়া শান্তিতেই মিটেছে ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন।

    কোথাও ইভিএম সংক্রান্ত অভিযোগ উঠে এসেছে। কোথাও অভিযোগ উঠেছে বিরোধী শিবিরের এজেন্টদের বুথে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। সকালে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার পর এমন বিক্ষিপ্ত কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। তবে বড়সড় কোনও গোলমালের খবর সারা দিনে উঠে আসেনি। রাজ্যে উপনির্বাচনের জন্য মোট ১০৮ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করেছে কমিশন। ২২ কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছিল তালড্যাংরায়। সকালে তালড্যাংরার পাঁচমুড়া বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২১ নম্বর বুথের একশো মিটারের মধ্যেই তৃণমূল প্রার্থীর ছবি দেওয়া ভোটারস্লিপ বিলি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তা নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। আবার বিবড়দা সচ্চিদানন্দ বিদ্যাপীঠের ৭৪ নম্বর বুথে তৃণমূলের পোলিং এজেন্টের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে। তিনি বুকে দলীয় প্রতীক সেঁটে বসেছিলেন। পরে অবশ্য প্রিসাইডিং অফিসার সেটি খুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন।

    উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়াতেও সদরপুর অঞ্চলে ২০০ নম্বর বুথে তৃণমূলের এজেন্টের সঙ্গে বচসায় জড়ান বিজেপি প্রার্থী বিমল দাস। দরজার পাশের একটি ইভিএমকে কেন্দ্র করে দু’জনের তর্কাতর্কি শুরু হয়েছিল। বচসার আঁচ বুথের বাইরেও পড়েছিল। তবে পরিস্থিতি বেশি জটিল হওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বুথের বাইরে থেকে দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের জটলা সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া বিশেষ কোনও গোলমালের খবর আসেনি হাড়োয়া থেকে। বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত হা়ড়োয়ায় ৭৩.৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতেও বুধবার ভোট ছিল। সেখানেও মোটের উপর শান্তিতেই ভোট হয়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত নৈহাটিতে ভোট পড়েছে ৬২.১০ শতাংশ। নৈহাটির ভোট শান্তিপূর্ণ হলেও, ঘটনাচক্রে ভাটপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। যদিও ওই অঞ্চলটি নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নয়।

    কোচবিহারের সিতাইয়ের ভোটও মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটেছে। সিতাই হাই স্কুলটিকে আদর্শ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করা হয়েছিল। সেখানে সকালে কোনও রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্ট ছিলেন না। তাই ভোটকর্মীরাই মকপোল পর্ব সেরে নেন। বুধবার সিতাইয়ের প্রায় সিংহভাগ বুথেই বিজেপির এজেন্ট দেখা যায়নি। পদ্মশিবিরের অভিযোগ, তাদের এজেন্টদের আগে থেকেই ভয় দেখানো হয়েছে। যদিও তৃণমূল শিবির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপির সংগঠন নিয়ে। তবে সিতাইয়ের দু’টি জায়গায় ইভিএম সংক্রান্ত অভিযোগ উঠে এসেছে। একটি বুথে ইভিএমের দু’টি বোতামে সেলোটেপ লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি প্রার্থী দীপক রায়ের দাবি, বুথ পরিদর্শনে গিয়ে সেটি দেখতে পান। প্রসঙ্গত, ওই বুথেও বিজেপির কোনও এজেন্ট ছিল না। পরে অন্য একটি বুথেও ইভিএমের বোতামে আঠা দিয়ে কাগজ আটকে দেওয়া ছিল বলে অভিযোগ বিজেপির। এ ছাড়া আর কোনও গোলমালের খবর মেলেনি সিতাইয়ে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬৬.৩৫ শতাংশ।

    মেদিনীপুরেও সকাল থেকে মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট হয়েছে। শালবনিতে বুধবার সকালে বিজেপির এক কর্মীকে মারধর করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই অঞ্চলটি মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রেরই অন্তর্গত। বিকেলে বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায় জানান, ওই দলীয় কর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া মেদিনীপুরে কোথাও বড়সড় গোলমালের অভিযোগ নেই। বিজেপির এজেন্টদের বুথে বসতে দেওয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগও উঠে আসেনি। প্রসঙ্গত, উপনির্বাচনে অশান্তির আশঙ্কায় মঙ্গলবারই পুলিশকে সতর্ক করেছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কোথাও অশান্তি হলে পথ অবরোধ এবং প্রয়োজনে পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও করারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। তবে বুধবার সকাল থেকে এখনও পর্যন্ত মেদিনীপুর বিধানসভা এলাকার কোথাও পথ অবরোধের খবর নেই। পুলিশ সুপারের অফিসও ঘেরাও হয়নি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেদিনীপুরে ভোট পড়েছে ৭১.৮৫ শতাংশ।

    আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটেও বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৬৪.১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিক্ষিপ্ত দু’একটি ঘটনা ছাড়া সেখানেও ভোট শান্তিতেই মিটেছে। মাদারিহাটের মুজনাই গ্রামে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী রাহুল লোহার। ওই সময়ে তৃণমূলের কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও শুনতে হয়। এমনকি তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ পদ্মশিবিরের। এ ছাড়া মাদারিহাটের ভোটেও কোনও বড়সড় গোলমালের অভিযোগ নেই।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)