নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: পালসিটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকত ‘পুলিস’ লেখা গাড়ি। সাত-আটজন ‘ষণ্ডামার্কা’ যুবক রাস্তা দিয়ে যাওয়া গাড়ির উপর কড়া নজর রাখত। বালি, গোরু বা পাথরবোঝাই ট্রাক দেখলেই শুরু হতো ‘কেরামতি’। গাড়ি দাঁড় করিয়ে নোট নেওয়া হতো। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাদের মেমারি থানার পুলিসের একাংশ লাইসেন্স দিয়ে রেখেছিল। এক বছর ধরে তাদের মদতেই তোলাবাজি চলত। দিনের পর দিন এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন অনেকেই। কিন্তু মাথার উপর ‘বাবু’দের হাত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখাত না। কিন্তু সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে পুলিসের শীর্ষস্তরে অভিযোগ যায়। এরপরই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পাঁচ তোলাবাজকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে মেমারি থানার পুলিস। পালসিট ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা অফিসারকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ধৃতরা মুখ খুললে পুলিসের অনেকের মুখোশ খুলে যাবে। প্রতি রাতে তোলাবাজি করা লক্ষাধিক টাকা কোথায় যেত তা নিয়ে তদন্ত হলে অনেকেই বিপাকে পড়বেন।
পুলিসের শীর্ষস্তরের এই পদক্ষেপে খুশি এলাকার বাসিন্দারা। তাদের দাবি, শীর্ষ মহলের আধিকারিকরা আগে এধরনের পদক্ষেপ নিলে তারা এতটা বাড়াবাড়ি করতে পারত না। তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করেন। কেউ অনিয়ম করলে ছাড় পাবে না। ওই ঘটনায় যারাই যুক্ত থাক না কেন পুলিস পদক্ষেপ নেবে। বিজেপি নেতা রাজু পাত্র বলেন, তোলাবাজি বহুদিন ধরেই চলছে। শুধু ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করলে হবে না। তাদেরকে কে বা কারা মদত দিত সেটাও তদন্ত করে দেখা উচিত। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মেমারি রেলগেটের কাছেও প্রতি রাতে একইভাবে তোলাবাজি চলে।
পুলিস জানিয়েছে, ধৃতদের নাম সন্তু ঘোষ, কমল মণ্ডল, দেবরাজ ঘোষ, সোমনাথ পালিত, বিপত্তারণ রায়। তাদের বাড়ি আউশগ্রাম এবং ভাতার থানা এলাকায়। কীভাবে এই চক্রের পর্দা ফাঁস হল? পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে একটি ট্রাক আটকায় পুলিসের বেশধারী তোলাবাজরা। টাকা দিতে না পারায় তারা ট্রাক চালককে মারধর করে। তাদের মোবাইলও ভেঙে দেওয়া হয়। ট্রাকমালিক বিষয়টি লিখিতভাবে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিসকে জানান। এরপরই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শীর্ষস্তরের এই পদক্ষেপে অনেকেরই বুকে কম্পন ধরে গিয়েছে। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, অভিযোগ হওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। বিশেষ দল নজরদারি চালায়। তারপরই ওই গ্যাংটিকে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয়। পালসিটে দিনের পর দিন তোলাবাজি চললেও সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক কেন পদক্ষেপ নেননি তা নিয়ে শীর্ষ মহল প্রশ্ন করে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, শুধু ওই ফাঁড়ি ইনচার্জ নয়, একটু খতিয়ে দেখলেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসবে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেকেই এই ঘটনার পর স্ক্যানারে রয়েছেন। নিজস্ব চিত্র