শিক্ষাদপ্তরের তথ্য দিয়ে অর্ধেক বখরা, কম্পিউটার শিক্ষক রকির ভূমিকায় রহস্য
বর্তমান | ১৪ নভেম্বর ২০২৪
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: শিক্ষকতার আড়ালে সাইবার প্রতারণা চক্র চালাত মালদহের কালিয়াচকের রকি শেখ। ট্যাবের টাকা জালিয়াতির তদন্তে নেমে কম্পিউটারের শিক্ষকের ভূমিকায় তাজ্জব পুলিস আধিকারিকরা। প্রতারণার অর্ধেক টাকা বখরা দিতে হতো তাকে। সেই শর্তেই সে এই চক্রে যুক্ত হয়েছিল। পুলিস জানতে পেরেছে, একটি সংস্থার মাধ্যমে দেড় বছর অগে সে মালদহের ভগবানপুরের একটি স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়। শিক্ষাদপ্তরের বিভিন্ন বিষয় সে অল্প সময়ের মধ্যে কুক্ষিগত করে নেয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে তাকে সরকারি পোর্টালের পাসওয়ার্ডও দিয়ে রেখেছিল। সেই সুযোগই সে কাজে লাগাত। তার সঙ্গে অনেক আগে থেকে সাইবার প্রতারক হাসেম আলির সম্পর্ক ছিল। সে কম্পিউটারে ডিপ্লোমা করে। সেই কারণে অনলাইন প্রযুক্তির সব কিছুই সে জানত। এই দু’জন মিলে প্রথমে প্রতারণার চক্র তৈরি করে। হাসেম তার পরিচিতদের কাজে লাগায়। তাদেরকে দিয়ে তারা আকাউন্ট খোলানোর কাজ করত।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারণার মোটা অঙ্কের টাকা রকি শেখ পেয়েছে। সেই টাকা সে কোথায় কীভাবে ব্যয় করত সেটা নিয়ে পুলিস তদন্ত শুরু করেছে। তার নামে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে সেই অ্যকাউন্টগুলিতে প্রতারণার টাকা যায়নি। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, ধৃতর বিরুদ্ধে পুরনো কোনও অপরাধমূলক কাজের রেকর্ড নেই। গ্যাংয়ের বাকি সদস্যরাও আগে কখনও অপরাধে জড়ায়নি। তবে, শুধু তরুণের স্বপ্ন নয়, অন্যান্য প্রকল্পের টাকা হাতানোরও পরিকল্পনা করেছিল তাদের। ধৃত জেরায় জানিয়েছে, সরকার ট্যাবের টাকা দেওয়ার পরই পুজোর ছুটি পড়ে গিয়েছিল। তাই টাকা হস্তান্তর হয়ে গেলেও প্রথমে কেউ টের পাবে না বলেই তাদের অনুমান ছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগেই তারা টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কয়েকজন ছাত্রর জন্যই তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বর্ধমান সিএমএস স্কুলের কয়েকজন পড়ুয়া প্রধান শিক্ষককে জানায় তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে বুঝতে পারেন সরকার ওই পড়ুয়াদের নামে টাকা দিলেও তা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পরই বর্ধমান সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করে। পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পারে, জালিয়াতির টাকা উত্তর দিনজাপুরের কয়েকটি অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। আধিকারিকরা তড়িঘড়ি ওই অ্যাকাউন্টগুলি লক করার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানায়। সেই মতো টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পারে একটি মোবাইল নম্বর থেকে পোর্টালে অ্যাকসেস নেওয়া হয়েছে। সেই মোবাইল নম্বরের খোঁজ নিতে গিয়ে হাসেমের নাম পুলিস পায়। তার গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু হয়। পূর্ব বর্ধমান পুলিস তাকে মালদহ থেকে গ্রেপ্তার করে আনে। তার কাছে থেকেই ওই কম্পিউটার শিক্ষকের নাম পায় তারা। দু’জনের মধ্যে ফোনে প্রায়ই কথা হতো। তদন্তকারীরা পরে জানতে পারেন, ওই শিক্ষক পোর্টালের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তারপরই তাকে টানা জেরা করা হয়। প্রথমবার জেরা করার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রমাণ সহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএসপি (ক্রাইম) সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ধৃতর কাছে থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।