দেবাঞ্জন দাস, দার্জিলিং: ‘হকের টাকা বন্ধ রেখে পদ্মপার্টি বাংলায় আসে শুধু সাধারণের ভোট কিনতে। টাকা ছড়িয়ে জনমত জোগাড়ে নামে বিজেপি। মুখে নানা প্রতিশ্রুতি বিলি করে। কিন্তু ভোট শেষে টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। পাহাড় তার অন্যতম উদাহরণ’। বুধবার দার্জিলিং ম্যালে সপ্তম সরস মেলার উদ্বোধন করে এই ভাষাতেই গেরুয়া শিবির ও তার দোসরদের বিঁধলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষণীয় বিষয় হল, পদ্মপার্টির স্বঘোষিত গড় বলে পরিচিত শৈলশহরে মমতার এই বার্তায় সভাস্থল যেভাবে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল, তাতে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের ইঙ্গিত স্পষ্ট। মমতা আরও বলেন, ‘পাহাড়কে ভালোবেসে আসি, বারবার আসব। পাহাড়-সমতল, আমার কাছে দুটোই প্রিয়।’ উদাত্ত কণ্ঠে মমতার স্লোগান—‘জয় বাংলা, জয় গোর্খা।’ পাহাড়-সমতলকে এক সুরে বাঁধার এই আহ্বানকে করতালি ও উদ্দীপনার সিংহগর্জনে স্বাগত জানিয়েছে ম্যালের জমায়েত। সাহস দেখিয়েছেন জিটিএ প্রধান অনীত থাপাও। মঞ্চ থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উনি শুধু দিতে আসেন, নিতে আসেন না। ভোটের সময়ে আসেন না। অথচ প্রতিবার আমরা তাঁকে ফিরিয়ে দিই।’
শান্ত পাহাড়ে অশান্তির বাতাবরণ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা নতুন করে শুরু করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী একটা অংশ। সে উপলব্ধি রয়েছে মমতারও। বললেন, ‘অনীত এগিয়ে চলুক। সঙ্গে আছি, থাকব। পাহাড়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি। পাঁচ বছর অন্তর একজন করে নেতা আসে। ৩৬৫ দিনে মাত্র একদিন দেখা যায়। কিন্তু আমরা সারা বছর থাকি। শান্তি আর উন্নয়ন নিয়েই থাকতে চাই। পাহাড়ে অশান্তির চেষ্টা কোনওভাবেই বরদাস্ত করব না।’ ফের করতালির সিংহগর্জন সভাস্থলে।
পাহাড়ে যুব সম্প্রদায়কে রোজগার দিতে চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বড়সড় পরিকল্পনা করে তা রূপায়ণে তৎপর হয়েছেন মমতা নিজেই। সেই প্রেক্ষিতে মমতার ঘোষণা—‘রাজ্য সরকার, জিটিএ এবং বেসরকারি উদ্যোগ মিলিয়ে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ও মিরিকে একটি করে আইটিআই আর পলিটেকনিক তৈরি করা হবে। উৎকর্ষ বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি পাবে স্থানীয় যুবক-যুবতীরা।’ এখানেই থেমে থাকেননি মমতা। দপ্তরের প্রধান সচিব সুব্রত গুপ্তকে তাঁর নির্দেশ—‘বাংলা ছেড়ে তুমি তো দিল্লি চলে যাবে। যাওয়ার আগে আইটিআই ও পলিটেকনিকের জমি খুঁজে দিয়ে যেও। এটা ফেলে রাখলে চলবে না।’