নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত ও সংবাদদাতা, বসিরহাট: প্রশাসনের প্রচেষ্টা সার্থক। শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হল হাড়োয়া বিধানসভা উপ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। বুধবার সকাল থেকে উৎসবের মেজাজেই বুথে এসেছেন ভোটাররা। উৎসাহের সঙ্গে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাড়োয়া বিধানসভায় ৭২.৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এদিন সকাল থেকে বুথের সামনে ভোটারদের যে লম্বা লাইন চোখে পড়েছিল, দুপুররের দিকে তাতে কিছুটা ছেদ পড়ে। তিনটের পর থেকে ফের দলে দলে ভোটার বুথমুখী হন। মহিলা ও নতুন ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সকালের দিকে হাড়োয়া পঞ্চায়েতের একটি বুথে ইভিএম বসানো নিয়ে কিছুটা অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে তা মিটেও যায়। দেগঙ্গায় আইএসএফ প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। এরকম সামান্য এক-দু’টি ঘটনা ছাড়া ভোটগ্রহণ পর্ব ছিল অবাধ ও শান্তিপূর্ণ।
ভোটের দিন হাড়োয়া বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, বিরোধীরা কার্যত ময়দান থেকে ‘ভ্যানিশ’। ফাঁকা মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৃণমূল। দেগঙ্গা হোক বা বারাসত ২ ন ব্লক— কোথাও বুথের আশেপাশে বিরোধীদের ক্যাম্প চোখে পড়েনি। সকালের দিকে এক-দু’টি জায়গায় বিজেপি বা আইএসএফের ক্যাম্প চোখে পড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি জনশূন্য হয়ে পড়ে। অনেক বুথে বিরোধীদের এজেন্ট না থাকায় সেই জায়গায় তৃণমূলের লোকজনই বসে পড়েন বলে অভিযোগ। রাজারহাট থানা এলাকায় রয়েছে হাড়োয়া বিধানসভার ১৪টি বুথ। সেখানে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এমনকী, যে শাসন এলাকায় ভোট মানেই বোমা-গুলির দাপট বলে মনে করা হতো, সেখানেও এদিন শান্তিপূর্ণ উপ নির্বাচনের সাক্ষী থেকেছে। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বলছে, সিংহভাগ বুথেই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। এমন সুষ্ঠু ভোট আগে হয়নি। হাড়োয়া বিধানসভায় মোট ২৭৯টি বুথের মধ্যে ৩৪টি ছিল ‘স্পর্শকাতর’। এসব বুথে যথারীতি বাড়তি নজরদারি ছিল পুলিস-প্রশাসনের। সিংহভাগ বুথে বিজেপি এজেন্ট দিতেই পারেনি। একই ঘটনা ঘটেছে আইএসএফ বা কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও। এদিন বারাসত ২ নম্বর ব্লকের দাদপুর এলাকায় আইএসএফের ১১জন বুথ এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। আতঙ্কে তাঁদের বাড়িছাড়া হতে হয় বলে খবর যায় পুলিসের কাছে। পরে তাঁদের বুথে বসানোর ব্যবস্থা করে শাসন থানার পুলিসই। পাকদহের নতুন ভোটার মানছুরা খাতুন বলেন, ‘গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’ হাড়োয়ার বিজেপি প্রার্থী বিমল দাস বলেন, ‘সব বুথে আমাদের এজেন্ট বসানো সম্ভব হয়নি। সদরপুর প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের ২০০ নম্বর বুথে ইভিএম বসানোর সময় কারচুপির চেষ্টা হয়। আমি বাধা দিতে গেলে তৃণমূল অশান্তি করে। তবে মোটের উপর শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হয়েছে।’ তৃণমূল প্রার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উৎসবের মেজাজে মানুষ ভোট দিয়েছে। বিরোধীদের কাজ হল অভিযোগ করে সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকা। আমরা তাতে গুরুত্ব দিচ্ছি না।’