• নৈহাটিতে কমল ভোটের হার
    বর্তমান | ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নৈহাটি: ছ’মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে নৈহাটি বিধানসভা এলাকায় ভোট পড়েছিল ৭৬ শতাংশ। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে এখানকার ৭৯ শতাংশ ভোটার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। সেই জায়গায় বুধবার উপ নির্বাচনে ভোট পড়ল প্রায় ৬৫ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় বহু মানুষ বুথমুখো হননি। তাই পঞ্চায়েত এলাকার তুলনায় নৈহাটি পুরসভা অঞ্চলে ভোটদানের হার ছিল বেশি। তবে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া এদিন নৈহাটির ভোটপর্ব ছিল শান্তিপূর্ণ। সকালের দিকে ১২টি ইভিএম এবং পাঁচটি ভিভিপ্যাট মেশিন খারাপ হলেও দ্রুত সমস্যা মেটানো হয়। বহু বুথে বিজেপির এজেন্ট ছিলেন না। সেই তুলনায় বাম প্রার্থীর এজেন্টদের সিংহভাগ বুথে দেখা গিয়েছে। কংগ্রেসের এজেন্টকেও বেশিরভাগ বুথে দেখা যায়নি। 


    এদিন বড়মা’র মন্দিরে তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে পুজো দিতে গেলে পুণ্যার্থীরা তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। ভোটের জন্য বুধবার মন্দির বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। ওই অবস্থায় সনৎবাবু পুজো দিয়ে বেরতে গেলে পুণ্যার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁদেরও মন্দিরে ঢুকে মাকে দর্শনের সুযোগ দেওয়ার দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। 


    সকাল সকাল ভোট দেওয়ার প্রবণতা মানুষের মধ্যে থাকেই। তাই ওই সময় বুথে বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়ে। কিন্তু বুধবার দেখা গেল, নৈহাটির কোনও বুথেই ভোটারদের সেরকম লাইন নেই। বেলা বাড়তে অবশ্য ভোটাররা ধীরে ধীরে বুথমুখী হন। হুড়োহুড়ি বা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা ছাড়াই ভোট দিয়ে গুটিগুটি পায়ে বাড়ির পথ ধরেছেন তাঁরা। শুরু থেকেই তৃণমূল প্রার্থী গ্রাম থেকে শহর চষে বেড়িয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্র, বামফ্রন্ট সমর্থিত সিপিআইএমএল প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার, কংগ্রেস প্রার্থী পরেশ সরকারও পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁরাও নিজেদের মতো করে এলাকায় ঘুরেছেন। বুথে বুথে ঘুরে কথা বলেছেন এজেন্টদের সঙ্গে। তবে বিরোধীদের বুথ ক্যাম্প সেভাবে নজরে পড়েনি। কিছু জায়গায় বেলা বাড়তেই বিরোধী এজেন্ট উধাও হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল চাপা সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছে। কোথাও বুথ এজেন্টকে মেরে বের করে দেওয়া, কোথাও আবার কাউকে বিরোধী দলের ভোটার বলে দেগে দিয়ে হুমকি, এমনকী কয়েকটি বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগও তুলেছে বিরোধীরা। 


    দিনভর ব্যস্ততার মধ্যেও তৃণমূল প্রার্থী দলীয় কার্যালয়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরে ৪০ মিনিটের ভাতঘুমও দিয়েছেন। দিনের শেষে ভোট নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘কোথাও মারধর, বুথ দখল, ছাপ্পা—এসব কিছুই হয়নি। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন। আমাদের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।’ বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্র বলেন, ‘আমাদের অনেক এজেন্টকে বুথ থেকে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় ছাপ্পা হয়েছে।’ বাম প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার বলেন, ‘মোটের উপর নির্বিঘ্নে ভোট হয়েছে। দু’-একটি জায়গায় অশান্তির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিসকে জানিয়েছি। তাদের ভূমিকা ঠিকঠাক মনে হয়েছে।’ কংগ্রেস প্রার্থী পরেশনাথ সরকার বলেন, ‘গ্রামের দিকে বাইক বাহিনী টহল দিয়েছে। মারপিট, রক্তারক্তি হয়নি ঠিকই, বরং বলা যেতে পারে, শ্মশানের শান্তিতে ভোট হয়েছে।’ বারাকপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ বারিক বলেন, ‘নৈহাটির ভোট নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে। কোথাও কোনও বড় অঘটন বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
  • Link to this news (বর্তমান)