বৈষ্ণবনগর থেকে ধৃত রকি শেখ, পিন্টু শেখ, জামাল শেখ ও শ্রবণ সরকারের বাড়ি এলাকার বিভিন্ন গ্রামে। রকির কাজকর্মের হদিস পাওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, পুরো ঘটনায় সে-ই কি মূল মস্তিষ্ক? পুলিশ সূত্রের দাবি, কম্পিউটারের বিভিন্ন ভাষা জানা রকি ‘হ্যাকার’ হিসাবে কাজ করত। গ্রামে একটি সাইবার ক্যাফে খুলে ছাত্রছাত্রী কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আড়ালে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষা দফতরের পোর্টালে ‘লগ-ইন’ করার আইডি ‘হ্যাক’ করে সে নিজের ‘শাগরেদদের’ সরবরাহ করত বলে দাবি। তার ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ধৃতেরা চার জনেই একই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা হওয়ায়, তাদের মধ্যে কোনও যোগ-সূত্র রয়েছে কি না, দেখছে পুলিশ। বুধবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হলে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। ধৃত শ্রবণ তৃণমূলের এসসি সেলের কালিয়াচক ৩ ব্লক সভাপতি জীতেন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে। বাকি দুই যুবক গ্রামে সাইবার-ক্যাফে চালায়। জীতেন্দ্রনাথ বলেন, “আমার ছেলেকে ফাঁসানো হচ্ছে। সে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।” এর আগে বৈষ্ণবনগর থেকেই হাসেন আলি নামে এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। পাশাপাশি একই কারণে অন্য তিন ধৃতকে এ দিনই মেদিনীপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঘিরনিগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের নয়াবাড়ি ও জাগিরবস্তি থেকে শরিফুল ইসলাম ও কৃষ্ণপদ বর্মণ নামে দু’জনকে ধরা হয়। এ দিন ধৃতদের ইসলামপুরের আদালতে তোলা হলে তিন দিনের ট্রানজ়িট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। কৃষ্ণপদ রাজমিস্ত্রির কাজ করে। শরিফুল কাঁচা চা পাতার পাইকার। সূত্রের খবর, ট্যাব কাণ্ডে তাদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকরা হয়েছিল। ধৃতদের দাবি, তারা কিছুই জানে না।
লালবাজার মনে করছে, কলকাতার পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা হ্যাক করে হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উত্তর দিনাজপুর বা ওই জেলা সংলগ্ন কোনও চক্রই জড়িত। যারা বিভিন্ন স্থানীয় গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কমিশনের বিনিময়ে ব্যবহার করে ট্যাবের জন্য নির্ধারিত ওই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। লালবাজার জানিয়েছে, কলকাতার সরশুনাগার্লস স্কুলের ছাত্রীদের ট্যাবের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাতেই চোপড়া থেকে কৃষ্ণপদ এবং সরিফুলকে গ্রেফতার করা হয়।
এক পুলিশকর্তা জানান, ওই দু’জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দশ হাজার টাকা করে গিয়েছিল। তার বিনিময়ে তারা তিনশো টাকা করে পেয়েছে। যে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কমিশনের ভিত্তিতে ব্যবহার করার জন্য বলেছিল, তাকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। ওই অভিযুক্তও উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দা। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ ওই ঘটনায় যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে তিন জনেরই বাড়ি উত্তর দিনাজপুরে। ধৃতদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ না থাকলেও, চক্রের মাথা এক জনই বলে মনে করছে লালবাজার।
লালবাজার জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানা এলাকার পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা হ্যাক করে হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় থানা প্রতি একটি করে মামলা রুজু করা হয়েছে। শহরের মোট ৭২ জন ছাত্র-ছাত্রীর ট্যাবের টাকা হাতিয়েছে প্রতারকেরা। প্রায় সব টাকা গিয়েছে উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ব্যাক্তির অ্যাকাউন্টে। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, দুর্নীতির মূল খুঁজতে ফরেন্সিক অডিট করা হবে। তাতে বোঝা যাবে, ঠিক কোন পর্যায়ে ওই পড়ুয়াদের নাম এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লিস্ট হ্যাক করা হয়েছে।