ট্যাব কেনার জন্য ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ১০ হাজার টাকা করে দেয় রাজ্য সরকার। এ বছর একাধিক স্কুলের অনেক পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে না বলে অভিযোগ। ঘটালের খড়ার শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দির স্কুল সেই তালিকায় নবতম সংযোজন। জানা গিয়েছে, ওই স্কুলের একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণি মিলিয়ে ২৫৯ জন পড়ুয়া ট্যাবের টাকার জন্য সংশ্লিষ্ট পোর্টালে আবেদন করেছিল। অভিযোগ, ২৫৯ জনের মধ্যে ২২ পড়ুয়া টাকা পায়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, টাকা চলে গিয়েছে অন্যের অ্যাকাউন্টে। একই স্কুলের আরও ২৪ পড়ুয়াও ট্যাবের টাকা না মেলার অভিযোগ তুলেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, প্রতারণা এড়াতে তাদের টাকা ‘হোল্ড’ করানো হয়েছে।
ঘাটালের ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌতমকুমার জানা জানান, কী ভাবে এক জন পড়ুয়ার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গেল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। হ্যাকিংয়ের কারণের এমন সমস্যা হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ুয়াদের থেকে অভিযোগ পেয়ে আমরা ব্যাঙ্কের তথ্য সংগ্রহ করি। জানতে পারি, ওই ২২ পড়ুয়ার টাকা তুলে নিয়েছে প্রতারকরা।’’ তাদের প্রাপ্য টাকা মূলত উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, শিলিগুড়ির কয়েক জনের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।
ট্যাবের টাকা বেহাত হওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে উত্তাল রাজ্য। বিভিন্ন জেলা থেকে ট্যাবের টাকা গায়েব হওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতাতেও ট্যাবের টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যেই এই মর্মে অভিযোগ দায়ের হয়েছে যাদবপুর, সরশুনা, জোড়াসাঁকো, গল্ফগ্রিন থানায়। তদন্তকারীদের অনুমান, এই চক্রের শিকড় ছড়িয়ে অনেক গভীরে। জাল হয়তো বিস্তৃত বাইরের রাজ্যেও। ইতিমধ্যেই পুলিশ তদন্তে নেমে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের মধ্যে সমাজের বিভিন্ন পেশার লোক রয়েছেন। কেউ চা-শ্রমিক, কেউ আবার কৃষক। রয়েছেন গৃহশিক্ষকও। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃতদের প্রায় সকলের সঙ্গেই কোনও না কোনও ভাবে সাইবার ক্যাফের যোগ রয়েছে। এই প্রতারণায় নাম জড়িয়েছে বিহারে জামতাড়া গ্যাংয়েরও। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বেনিয়মের ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। সমস্যা সমাধানে একাধিক পদক্ষেপ শুরু করেছে তারা।