অবশেষে কয়লা পাচার মামলায় চার্জগঠনের প্রক্রিয়া শুরু হল
বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান। বহু চর্চিত কয়লা পাচার কাণ্ডের চার্জগঠন প্রক্রিয়া শুরু হল বৃহস্পতিবার। আসানসোল সিবিআই বিশেষ আদালতে চার্জশিটে নাম থাকা অভিযুক্তদের তিনটি ভাগে ভাগ করে চার্জগঠনের সুপারিশ করল সিবিআই। পাচার কাণ্ডের কিংপিন হিসেবে লালার বিরুদ্ধে ন’টি ধারায় চার্জ গঠন করার আর্জি জানানো হয়েছে। চুরির কয়লা নেওয়ার অভিযোগে দশটি বেসরকারি কারখানার শীর্ষ আধিকারিক ও ১২ জন ইসিএলে আধিকারিক সহ বাকিদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন ধারায় চার্জ গঠনের প্রস্তাব কোর্টকে দিয়েছে সিবিআই। রাজনৈতিক প্রভাবশালী বা পুলিস আধিকারিকদের নাম জাড়িয়েই কয়লা পাচার কাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। এদিন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী চার্জগঠনে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। চার্জগঠনের শুনানি শুরু হতেই শিল্পাঞ্চলের কয়লা মাফিয়াদের মুখ শুকোতে শুরু করে। কে শাস্তির কোপে পড়বে, তা নিয়ে চর্চা ছিল সর্বত্র।
২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর। এফআইআর রুজু করে কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্ত শুরু করে সিবিআই। অনুপ মাজি ওরফে লালার পাশাপাশি ইসিএলের কয়েকজন আধিকারিকের নাম এফআইআরে ছিল। এই তদন্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছিল। বহু পুলিস আধিকারিক সহ রাজ্যের শাসক দলের অতি প্রভাবশালী নেতাদের নাম চর্চায় এসেছিল। যদিও সিবিআইয়ের দেওয়া একাধিক চার্জশিটে তাঁদের কারও নামই ছিল না। লালা, জয়দেব মণ্ডল, নীরদবরণ মণ্ডল, গুরুপদ মাজি, নারায়ণ খাড়কার মতো বড় কয়লা মাফিয়া ও ইসিএলে আধিকারিক ও সিন্ডিকেট থেকে কয়লা নেওয়ার অভিযোগে ১০টি কোম্পানির আধিকারিকদের নাম চার্জশিটে আসে। তারপরই চলতে থাকে টালবাহানা। ৫০ জনের নাম ছিল অভিযুক্ত হিসাবে। বিভিন্ন আইনি জটিলতায় চার্জগঠনের দিন পিছতেই থাকে। চার্জগঠন প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছিল না। এর মধ্যেই অভিযুক্তদের একজন মারা যান। আর এক অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র পলাতক। বাকিরা মামলার প্রতি শুনানির দিনই বাদশাহী মেজাজে আসতেন। তাঁরা যেন ধরেই নিয়েছিলেন, এই মামলার চার্জগঠন হতেই বহু বছর লেগে যাবে। এদিন কিন্তু আদালতে তাঁদের সেই ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছে। নানা আইনি মারপ্যাঁচকে দূরে সরিয়ে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী চার্জগঠন প্রক্রিয়া শুরু করে দেন। সিবিআইকে চার্জফ্রেমের প্রস্তাব আদালতকে জানাতে বলেন। তিনটি ভাগে সিবিআই চার্জগঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। দশটি কোম্পানির আধিকারিকরা যে সব ধারায় অভিযুক্ত, তা উল্লেখ করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার। ইসিএলের ১২ জন আধিকারিক আগের আইপিসি (২০২০ সালের মামলা অনুযায়ী)-এর কী কী ধারায় ও প্রিভেনশন অফ করাপশন অ্যাক্টেটর কী কী ধারায় অভিযুক্ত, তা তুলে ধরেন। একই ভাবে অনুপ মাজি, বিকাশ মিশ্র ও রত্নেশ ভার্মা সহ বাকি অভিযুক্তরা কী কী ধারায় অভিযুক্ত, সেটাও তুলে ধরেন রাকেশ কুমার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ২১ নম্বর মাইনস মিনারেল অ্যাক্টও আরোপ করার আর্জি জানিয়েছে সিবিআই। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা সিবিআই যে সব ধারা অভিযুক্তদের দিয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি জানান। বিচারক অভিযুক্তদের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার জন্য সোমবার এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন। বিচারকের দাবি, আসন্ন সপ্তাহের মধ্যেই তিনি চার্জগঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে চান।