অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছিল দুই স্কুলছাত্রীর, বাড়িতে গেলেন বিডিও
বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: এক বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন বাবা। সহায় সম্বলহীন হয়ে দিনমজুরি খেটে কোনওমতে সংসার চালান মা। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে দুই মেয়েকে পড়ানোর সামর্থ্য কোথায়? অগত্যা অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছিল নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়া দুই কিশোরীর। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মুণ্ডাবস্তিতে ওই পরিবারের কাছে পৌঁছে দুই ছাত্রীর পড়াশোনার যাবতীয় ভার নিল প্রশাসন। শিশু দিবসে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল উপহার।
এদিন সকালে আধিকারিকদের নিয়ে অরবিন্দ পঞ্চায়েত এলাকায় ওই বাড়িতে আসেন জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার। কথা বলেন দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়ে মুষড়ে পড়া দুই কিশোরীর মা দীপা রায়ের সঙ্গে। তারপরই তাঁকে আধিকারিকরা জানিয়ে দেন, ওই দুই ছাত্রীর পড়াশোনার দায়িত্ব নিচ্ছে প্রশাসন। বিডিও বলেন, আপাতত ওই দুই ছাত্রীর পড়াশোনা চালানোর জন্য যা খরচ তা প্রশাসনের তরফে বহন করা হবে। এরপর ‘মিশন বাৎসল্য’ প্রকল্পে তারা যাতে প্রতিমাসে চার হাজার টাকা করে ভাতা পায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অসহায় ওই দুই ছাত্রীর মা বিধবা ভাতা পান না। তিনি যাতে ওই ভাতা পান, প্রশাসনিকভাবে তারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে এদিন জানান বিডিও। তিনি বলেন, এই দুই ছাত্রী ছাড়াও পাহাড়পুর, পাতকাটা ও বাহাদুর পঞ্চায়েতের আরও আটজন দুঃস্থ পড়ুয়ার পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসন।
গত বছর ১২ নভেম্বর মেয়েকে টিউশন থেকে নিয়ে আসতে গিয়ে ৩১ডি জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দিনমজুর শ্যামল রায়। তাঁর মৃত্যুতে দুই মেয়েকে নিয়ে কার্যত অথৈ জলে পড়েন দীপাদেবী। তারপর নিজেই কাজে নামেন। বর্তমানে তিনি জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে যে নির্মাণকাজ চলছে, সেখানে শ্রমিকের কাজ করছেন।
বিডিও’র কাছে নিজের সংসারের করুণ অবস্থার কথা বলতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি দীপাদেবী। বলেন, দুই মেয়েই জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলে পড়ে। একজন দশম, অন্যজন নবম শ্রেণিতে। ওদের ঠিকমতো টিউশন দিতে পারি না। মাইনে জোগাব কী করে। টোটোয় চেপে দুই বোন স্কুলে যায়। তারও খরচ আছে। আমি দিনরাত খেটে চলেছি, শুধু মেয়ে দু’টোকে পড়াব বলে। বিধবা ভাতা নিয়ে তাঁর অভিযোগ, বেশ কয়েকবার পঞ্চায়েতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বলা হয়েছে, এখন হচ্ছে না। পরে আসবেন। এদিন অবশ্য বিডিও আশ্বাস দিয়েছেন, ওই মহিলা যাতে দ্রুত বিধবা ভাতা পান, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।