• আধার প্রতারণার লেজুড়রাই এবার ট্যাব কাণ্ডের নেপথ্যে?
    বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, বর্ধমান ও রায়গঞ্জ: ট্যাব কাণ্ডে গ্রেপ্তারির সংখ্যা যতই বাড়ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর-চোপড়া যোগসূত্র। আর্থিক প্রতারণা কাণ্ডের নেপথ্যে উত্তরবঙ্গের এই এলাকাই এখন শিরোনামে। বছরখানেক আগেও রাজ্যে সাইবার প্রতারণার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে এই এলাকা। তখন চলছিল আধার প্রতারণা। আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত বায়োমেট্রিককে (আঙুলের ছাপ, রেটিনা) হাতিয়ার করে গ্রাহকের ব্যাঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরপর অভিযোগ ওঠে গোটা রাজ্যজুড়ে। আধার এনেবেল্ড পেমেন্ট সিস্টেম বা এইপিএস প্রতারণার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সরকারি পোর্টাল থেকে আম জনতার তথ্য চুরি রহস্য ফাঁস করে পুলিস। এবার কি সেই এইপিএস প্রতারণায় পরোক্ষভাবে জড়িতরাই ট্যাবকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড? এই সন্দেহই এখন কলকাতা ও রাজ্য পুলিসের গোয়েন্দাদের দুঁদে মস্তিষ্কে ঘোরাফেরা করছে। 


    এইপিএস প্রতারণার ক্ষেত্রে মূলত জমি বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সরকারি পোর্টাল থেকে হাপিস হয়ে যাচ্ছিল গ্রাহকের আঙুলের ছাপ। সেই ছাপকে কাজে লাগিয়েই সেই গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সঞ্চিত অর্থ গায়েব করে দিচ্ছিল প্রতারকরা। এই কাণ্ডের তদন্তে চোপড়া ও ইসলামপুর থেকে প্রায় ২০ জনের বেশি অভিযুক্তকে পাকড়াও করেছিল লালবাজার। রাজ্য পুলিসের গ্রেপ্তারির সংখ্যা আরও বেশি। তদন্তে উঠে আসে ভাড়ার অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছিল প্রতারিত অর্থ। ট্যাব কাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তেও ‘কাঁটা’ সেই ভাড়ার অ্যাকাউন্ট। অভিযুক্তদের উৎসস্থলও সেই চোপড়া। তাহলে কি শিক্ষাদপ্তরের কোনও ‘মীরজাফর’এর পাশাপাশি নেপথ্যে কাজ করছে কোনও সাইবার গ্যাং? স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট গঠন করে গোটা বিষয়টির তদন্তে নেমেছে লালবাজার। পৃথক তদন্ত চালাচ্ছে রাজ্য পুলিসও। 


    এইপিএস প্রতারণা কাণ্ডের সঙ্গে এই ট্যাব কেলেঙ্কারির কোনও যোগসাজশ রয়েছে কি না তা জানতে রাজ্যজুড়ে ধৃত ১১ জন অভিযুক্তের ফোন নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট খতিয়ে দেখছে সাইবার পুলিস। শুধু তাই নয়, ফরেন্সিক আধিকারিকরাও তা পরীক্ষা করবেন। বছরখানেক আগে এইপিএস প্রতারণার সময় এই অভিযুক্তরা পরোক্ষভাবে তাতে জড়িত কিনা তা তদন্তসাপেক্ষ। ধৃতদের বা তাঁদের কোনও আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতদের সাইবার অপরাধের রেকর্ড রয়েছে কি না তা পুলিসি নজরে। যদিও ভবানীভবনের দাবি, এখনও পর্যন্ত ধৃতদের পুরনো কোনও অপরাধের ইতিহাস পাওয়া যায়নি। রাজ্য পুলিস সূত্রের খবর, গ্রামের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট বা সিএসপিগুলি থেকে ডেটা এন্ট্রি অপরাটেরের মাধ্যমে গ্রাহকের গোপন তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। বৃহস্পতিবারও পূর্ব মেদিনীপুর পুলিস চোপড়া থেকে একজনকে আটক করেছে। অসুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার চালাত। অন্যের নথি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা তার অন্যতম কাজ। পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের টাকা হাতানোর অন্যতম মূলচক্রী মালদহর বৈষ্ণবনগরের রকি শেখ। পোর্টাল সংক্রান্ত ইনপুট গ্যাংয়ের বাকি সদস্যদের সরবরাহ করেছিল।


    তবে লালবাজারের তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। সিটের অফিসারদের প্রাথমিক অনুমান, স্কুল কিংবা ডিআই অফিস নয়, স্কুল শিক্ষাদপ্তরের অন্দর থেকেই হয়েছে প্রতারণা। কোনওভাবে ‘আনরেজিস্টার্ড’ আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে সরকারি পোর্টালে ঢুকেছে প্রতারকরা। বৃহস্পতিবার ডিসি ডিডি (স্পেশাল) বিদিতরাজ ভুন্দেশের নেতৃত্বে সিটের আধিকারিক বিকাশ ভবনে যান। সেখানেই তাঁরা সরকারি পোর্টালের সিকিউরিটি সিস্টেম, প্রোটোকল ইত্যাদি সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। এই প্রসঙ্গে, শিক্ষাদপ্তরের এক কর্তার জানিয়েছেন, যেকোনও তদন্তকারী সংস্থা এই কাণ্ডের তদন্ত করুক। আমরা সহযোগিতা করব।
  • Link to this news (বর্তমান)