নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: চিকেনের বড় বড় পিস। পাতে দেওয়ার পরও ধোঁয়া উঠছে বিরিয়ানি থেকে। বাচ্চাগুলির তর সইছিল না। ক্লাসরুমজুড়ে প্রবল কোলাহল। তবে বিরিয়ানি পাতে পড়ার পরই পিন ড্রপ সাইলেন্স। সাধ্যের বাইরে থাকা অতি সাধের বিরিয়ানি সাপটে খেয়ে একগাল হাসি বাচ্চাগুলির মুখে। শিশুদিবসে হাওড়ার বাঁকড়ার মোবারক হোসেন বালিকা বিদ্যালয় ম ম করল চিকেন বিরিয়ানির গন্ধে।
বৃহস্পতিবার শিশু দিবসে কমবেশি প্রতিটি স্কুলই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাঁকড়ার মোবারক স্কুলেও ছিল অনুষ্ঠান। এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই ছাত্রীরা ‘বিরিয়ানি, বিরিয়ানি’ করে শিক্ষিকাদের কাছে বায়না জুড়েছে। শিক্ষিকরা তাদের কিছু না জানিয়েই ঠিক করেন শিশুদিবসে বিরিয়ানি করা হবে। তবে বিষয়টি সারপ্রাইজই থাকুক। মোবারক বিদ্যালয়ে প্রাইমারি থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৯৫০। শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী, সহায়ক মিলিয়ে রয়েছেন আরও ২৩ জন। দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবার থেকে উঠে আসা এই স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়াই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। তাদের কাছে পেট পুড়ে বিরিয়ানি খাওয়া একটু দূরের বিষয়ই বটে। তাদের আবদার মেটাতে বুধবার সন্ধ্যা থেকে স্কুলে বিরিয়ানি তৈরির প্রস্তুতি শুরু।
ভোররাতে কাঠের জ্বালে আগুন ধরল। আট হাঁড়ি বিরিয়ানি রান্না শুরু। বাচ্চারা স্কুলে আসার পর গন্ধে টের পেল, বিরিয়ানি হচ্ছে। শিক্ষিকাদের কথায়, স্কুলে ঢোকার পর থেকে যেন তর সইছিল না ওদের। অনুষ্ঠান শেষ হতেই খাবারের জায়গায় হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এদিন স্কুলে এসেছিল সাড়ে সাতশো ছাত্রী। সবাই পেট ভরে চিকেন বিরিয়ানি, স্যালাড আর আইসক্রিম খেয়েছে। সুমাইয়া খাতুন, শিরিন খাতুন, সানিয়া খাতুন নামে তিন ছাত্রী বলে, ‘দিদিমণিদের কাছে আবদার করেছিলাম। কিন্তু ভাবতেই পারিনি আজই বিরিয়ানি পাব। দারুণ খেতে।’
প্রধান শিক্ষিকা ঝুমা ঘোষ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পরিবেশ অনেকটা বাড়ির মত করে তুলতে বিশেষ দিনগুলিতে স্পেশাল কিছু করার পরিকল্পনা থাকে আমাদের। অনেকদিন ধরেই ওরা বিরিয়ানি খাওয়ার আবদার করছিল। কিন্তু এতজন ছাত্রীর জন্য করাটা সহজ ছিল না। তবে এদিন ওদের সারপ্রাইজ দেব বলে ঠিক করেছিলাম।’ বিরিয়ানির স্বাদে যাতে কোনও খামতি না থাকে সে জন্য ভাড়া করে আনা হয়েছিল রাঁধুনি। তোড়জোড় ও পরিবেশন করেন মিড ডে মিলের কর্মীরা। সবমিলিয়ে হইরই ব্যাপার দিনভর। বাচ্চাগুলির মুখে হাসি যেন ধরে না। নিজস্ব চিত্র