৮০০ গ্রাম ওজনের সদ্যোজাতকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরাল বারাসত হাসপাতাল
বর্তমান | ১৫ নভেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: ভূমিষ্ট হওয়ার পর সদ্যোজাতের ওজন ছিল মাত্র ৮০০ গ্রাম। না ছিল ফুসফুস, না ছিল পরিণত হাত-পা। পাশাপাশি জণ্ডিস, শ্বাসকষ্ট সহ একাধিক উপসর্গ ছিল শরীরে। সাধারণত, সদ্যোজাতের ওজন থাকে আড়াই থেকে তিন কেজির মধ্যে। কিন্তু এতটা অপরিণত সদ্যোজাতকে বাঁচানোই যে কোনও হাসপাতালের কাছে চ্যালেঞ্জের। সেই অসাধ্য সাধন করল বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। প্রায় ৭০ দিন ওই সদ্যোজাতকে এসএনসিইউতে ভর্তি রেখে চিকিৎসার পর স্বাভাবিক অবস্থায় এনে বৃহস্পতিবার পরিবারের হাতে তুলে দিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর এমনই একটি দিনে ছোট্ট ফুটফুটে শিশুকে বাড়ি নিয়ে গেল পরিবার, যেদিন ছিল আন্তর্জাতিক শিশুদিবস। হাসপাতালের এই পরিষেবায় খুশি মা রুবিনা খাতুন ও বাবা নওয়াজ শরিফ। হাসপাতালেই চলে মিষ্টিমুখের পালা।
আমডাঙার সোনাডাঙা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি রুবিনা খাতুনের (২১)। এর আগে তাঁর দু’টি বাচ্চাই গর্ভস্থ অবস্থায় মারা গিয়েছে। মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে তৃতীয়বার সন্তানসম্ভবা হন তিনি। ৯ সেপ্টেম্বর পরিবারের সদস্যরা ডেলিভারির জন্য রুবিনাকে ভর্তি করেন বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। নর্মাল ডেলিভারি হয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটে সন্তান প্রসবের পর। মাত্র ৮০০ গ্রাম ওজনের পুত্রসন্তান প্রসব করেন তিনি। সেটি ছিল অপরিণত প্রসব। চিকিৎসকরা বলেন, প্রথমে দেখে মনে হয়েছিল একটা ছোট মাংসপিণ্ড। চোখ, নাক, কান কিছুই তেমন গঠন হয়নি। ফুসফুস সহ অন্যান্য অঙ্গের বিকাশও ঘটেনি।
এই সব ক্ষেত্রে সদ্যোজাতকে রেফার করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের এসএনসিইউতে রেখে ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। রুবিনা আবেগ ধরে রাখতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তৃতীয় সন্তান যে বাঁচবে, এই আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা অসাধ্য কাজ করেছেন। ছেলের নাম রেখেছি আয়াত শরিফ। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয় না বলে নিন্দুকরা অনেক কথা বলে। আমার অভিজ্ঞতা আলাদা।
হাসপাতালের সুপার ডাঃ সুব্রত মণ্ডল বলেন, ৭০ দিন এসএনসিইউতে রেখে শিশুটির চিকিৎসা চলে। মায়ের থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চিকিৎসক এবং নার্সরা চ্যালেঞ্জের মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছেন। আমি নিজে গিয়ে মনিটরিং করেছি। এই সত্তর দিনে সদ্যোজাতের ওজন প্রায় দু’কেজি হয়েছে। ফুসফুস সহ অন্যান্য অঙ্গের গঠনও স্বাভাবিক হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিশু দিবসে আমরা ওকে সুস্থ অবস্থায় মায়ের হাতে তুলতে পেরে আনন্দিত। নিজস্ব চিত্র