বৃহস্পতিবার রাত থেকে ওই কর্মসূচির পোস্টার ছড়াতে শুরু করেছে সমাজমাধ্যমে। যেখানে কর্মসূচির প্রচারকের জায়গায় দু’জনের নাম রয়েছে। তাঁদের এক জন চিকিৎসক তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। ওই বৈঠকের পরেই গোটা ডায়মন্ড হারবার লোকসভা জুড়ে ‘হেল্থ ফর অল’ (সকলের জন্য স্বাস্থ্য) কর্মসূচি শুরু হবে। সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ বলে খবর। ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আরও এক বার ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ বাস্তবায়িত হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যেমনটা হয়েছিল ২০২১ সালে বিধানসভা ভোট পরবর্তী সময়ে কোভিড-কালে। সেই সময়েই প্রথম ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-এর কথা শোনা গিয়েছিল অভিষেকের মুখে। কোভিডের নমুনা পরীক্ষায় সব লোকসভাকে টেক্কা দিয়েছিল অভিষেকের সংসদীয় কেন্দ্র, যা নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ তখন ‘খোঁচা’ দিয়েছিলেন অভিষেককে। কিন্তু চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক বা এমন ধরনের বিশেষ কর্মসূচিতে অভিষেককে আগে যোগ দিতে দেখা যায়নি। বস্তুত, এমন কর্মসূচিও এত সাড়ম্বরে এর আগে হয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। সেই কারণেই আর জি কর-কাণ্ডের পরবর্তী পর্যায়ের সঙ্গে এই উদ্যোগকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও অনেকের মতে, এর সঙ্গে আরজি করের ঘটনা এবং তৎপরবর্তী চিকিৎসক আন্দোলনের কোনও যোগসূত্র নেই।
ওই কর্মসূচির প্রস্তুতিতে শনিবার আলিপুরের প্রশাসনিক ভবনে এক বৈঠক হবে। সেখানে থাকার কথা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক, ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ অন্যদের। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্রে এক মাস ধরে চলবে স্বাস্থ্যশিবির। প্রতি দিন ১০০টি করে শিবির হবে। সেখানে যে চিকিৎসকদের থাকার কথা, তাঁদের নিয়েই ৩০ নভেম্বর পরিকল্পনা বৈঠক করবেন অভিষেক।
ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের এই কর্মসূচিকে শাসকদলের অন্দরে দু’ভাবে দেখা হচ্ছে। একাংশের প্রশ্ন, এই কর্মসূচি কি রাজ্য সরকারের ‘সমান্তরাল’ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করছে? আবার অন্য একটি অংশের বক্তব্য, চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের সঙ্গে যখন দলের ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে, তখন রাজনৈতিক ভাবে তা ‘মেরামত’ করার কৌশল নিয়েছেন অভিষেক। এই কর্মসূচি তারই প্রয়াস। অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন এই উদ্যোগের সঙ্গে প্রাক্তন সাংসদ শান্তনুর জড়িত থাকার কথাও। আরজি কর পর্বে তাঁর ‘ভূমিকা’ নিয়ে দলে প্রশ্ন উঠেছিল। শান্তনুকে মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করেছিলেন তৃণমূলের এই চিকিৎসক-নেতা। ফলে আরজি করের ঘটনায় প্রথম থেকেই তাঁর ‘সংযোগ’ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আরজি করের ঘটনা থেকে আপাতদৃষ্টিতে খানিকটা দূরেই সরে থেকেছেন অভিষেক। এই পর্বে তাঁকে খুব ‘সক্রিয়’ হতে দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি ‘মোক্ষম’ সময়ে তিনি ‘হস্তক্ষেপ’ করেছেন। আরজি কর-পর্বের শুরুতে ধর্ষকদের জন্য আইন এনে ‘এনকাউন্টার’ করার কথা বলেছিলেন অভিষেক। ১৪ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনার পরে অভিষেক জানিয়েছিলেন, তিনি সেই রাতেই কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে ফোন করে বলেছিলেন, যারা হাসপাতাল ভেঙেছে, গুন্ডামি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দল, মত এবং রং না দেখে ব্যবস্থা নিতে। ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে আরজি কর নিয়ে বক্তৃতা দেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’। বক্তৃতায় অভিষেক ‘মেয়েদের রাত দখল’ কর্মসূচিকে সম্মান জানানোর কথা বলেন, যা তৃণমূলের কোনও নেতার মুখে সেই প্রথম শোনা গিয়েছিল। ওই বক্তৃতাতেই অভিষেক প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন সন্দীপকে সিবিআই গ্রেফতার করছে না? ঘটনাচক্রে, তার পরে আরজি কর হাসপাতালে দুর্নীতি এবং তারও পরে ধর্ষণ-খুনের মামলায় ‘তথ্যপ্রমাণ লোপাট’ করার অভিযোগে সন্দীপকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।