• ট্যাবকাণ্ডে মালদহ ও চোপড়া থেকে আরও ধৃত
    বর্তমান | ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুরে স্কুল পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা জালিয়াতির ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। ধৃতদের মধ্যে মালদহের বৈষ্ণনগরের সুব্রত বসাক ও উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার নুর আলম রয়েছে। সুব্রত বৈষ্ণবনগরে একটি ব্যাঙ্কের সিএসপি(কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট) চালাত। তার কাছে অনেক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। ওই গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের কর্ণধার ট্যাবের টাকা ঢোকানোর জন্য অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়েছিল। শুক্রবার ধৃত সুব্রতকে তমলুক সিজেএম কোর্টে তোলা হলে বিচারক ১১দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন। ট্যাব কেলেঙ্কারির ঘটনায় চোপড়ার নুর আলম জড়িত বলে পুলিস জানিয়েছে। আজ, শনিবার ইসলামপুর আদালতে তোলার পর ট্রানজিট রিমান্ডে তাকে তমলুক থানায় আনা হবে।


    ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ২৩০জন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা জালিয়াতি হয়েছে। তারমধ্যে বেশিরভাগ টাকা গিয়েছে মালদহের বৈষ্ণনগরের অ্যাকাউন্টে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পাবে, সিএসপি এজেন্ট সুব্রত ওইসব অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়েছিল। বিনিময়ে প্রতি অ্যাকাউন্ট পিছু কমিশন নিয়েছে। বহু অ্যাকাউন্টের আইএফএসসি কোড এলোমেলো রয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের ট্যাবের টাকা ওইসব অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ভুয়ো অ্যাকাউন্টে লিস্ট দেওয়ার পরও তারাও নাগাড়ে হাতড়ে চলেছে। কারণ, অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট নম্বরের সঙ্গে ব্যাঙ্কের আইএফএসসি কোডের মিল নেই। তাই ফ্রিজ করতে গিয়েও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।


    ট্যাব জালিয়াতির ঘটনায় আগেই চোপড়া থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়ার কাহিনি জানতে পারে পুলিস। এরপরই কোলাঘাট থানার অফিসার আনন্দ মণ্ডলের নেতৃত্বে পুলিসের একটি টিম বৈষ্ণবনগরে রওনা দেয়। বৃহস্পতিবার সুব্রত বসাককে পাকড়াও করে শুক্রবার সকালে তমলুকে আনা হয়। দুপুর ১টা নাগাদ তাকে তমলুক সিজেএম কোর্টে পেশ করে পুলিস। ধৃতকে দীর্ঘ জেরার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তদন্তকারী অফিসার। সেইমতো ১১দিনের পুলিস কাস্টডির আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।


    বৃহস্পতিবার চোপড়ায় নুর আলম নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোবারক হোসেন, সাদ্দিক হোসেন এবং আসারুল হোসেনদের সঙ্গে নুর আলমও ট্যাব কেলেঙ্কারির ঘটনায় সরাসরি যুক্ত বলে তথ্য পেয়েছে পুলিস। চোপড়া থানার দাসপাড়া এলাকার ওই যুবকদের বয়স ২০থেকে ২৫বছরের মধ্যে। এলাকার বহু যুবক সাইবার প্রতারণার মাধ্যমে মানুষ ঠকানোর কাজে যুক্ত বলে অভিযোগ। ট্যাব কেলেঙ্কারির ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিস একটি টিম গঠন করেছে। সেই টিম হানা দিয়ে নুরকে পাকড়াও করেছে। 


    ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে ট্যাবের টাকা জালিয়াতির ঘটনায় আরও কারা জড়িত, সেটা খুঁজে বের করতে চাইছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিস। ইতিমধ্যে প্রতারণা হওয়া বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের সঙ্গে পুলিস অফিসাররা কথা বলেছেন। স্কুলের যেসব শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী বাংলার শিক্ষা পোর্টালে কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গেও পুলিস অফিসাররা কথা বলেছেন। কীভাবে প্রতারকরা ওই পোর্টালের লগ ইন অ্যাকসেস পেল, সেটাই খুঁজে বের করতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা। ভুয়ো অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য পুলিসের তরফে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্টে টাকা জমা থাকলে ফেরানোর কাজও শুরু হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)