সংবাদদাতা, চাঁচল: কেটে গিয়েছে প্রায় ৩০০ বছর। রাজার রক্ষাকালী মায়ের পুজোয় মেতে উঠতেন প্রজারাও। এখন আর নেই রাজা ও রাজ্যপাট। তবুও এতটুকুও জৌলুস হারায়নি সেই পুজো। আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পূজিতা হয়ে আসছেন মা রক্ষাকালী। বর্তমানে পুজোর ভার নিয়েছেন বাসিন্দারা। আজও প্রথা মেনে কার্তিক সংক্রান্তি তিথিতে মাতৃ আরাধনায় ব্রতী হন অসংখ্য ভক্ত। মালদহের চাঁচল সদরের সুকান্তপল্লিতে রক্ষাকালী মায়ের পুজোর প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। কার্তিক সংক্রান্তি তিথিতে এখানে মায়ের নির্দিষ্ট থানে মৃন্ময়ী প্রতিমা এনে শনিবার রাতভর পুজো হবে।
কথিত আছে, তৎকালীন চাঁচলের রাজার আমলে এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। রোগে আক্রান্ত প্রজাদের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়েন রাজা। রক্ষাকালী মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রজাদের মহামারীর হাত থেকে বাঁচাতে মাতৃ আরাধনা শুরু করেন রাজা শরৎচন্দ্র রায় বাহাদুরের পিতা ইশ্বরচন্দ্র রায় চৌধুরী। সেই থেকে রাজ প্রথা মেনে আজও কার্তিক সংক্রান্তি তিথিতে রক্ষাকালী মায়ের পুজো হয়ে আসছে। ভক্তদের বিশ্বাস, মায়ের দয়া অসীম। ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে মায়ের কাছে মানত করলে তা পূরণও হয়। আজও এই আত্মবিশ্বাস গেঁথে রয়েছে এলাকার মানুষজনের মনে। এখানে ফি বছর মাতৃ প্রতিমা তৈরির খরচ বহন করেন ভক্তরা। রীতি অনুযায়ী অন্ন সহ সাত রকমের ভাজা তরকারি দিয়ে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। তবে এক বিশেষ রীতি আজও বহাল রয়েছে। মণ্ডপের সামনের পুকুর থেকে একটি মাছ সংগ্রহ করে তা রান্না করে মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ভক্তদের আনা মাছ রান্না করে উপস্থিত পুণ্যার্থীদের খাওয়ান হয়।
রক্ষাকালীর পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে উঠেন ঘোষপাড়া ও জেলেপাড়া সহ গোটা চাঁচলবাসী। মায়ের কাছে অসংখ্য ডালা নিবেদন করা হয়। পুজোকে ঘিরে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। পুজো কমিটির সদস্য অপু চন্দ্র দাস বলেন, প্রতি বছরই ভক্তদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। পুজোর পরের দিন রাতে পাশের পুকুরে মায়ের নিরঞ্জন হবে। প্রতি বছরই এই পুজোয় অসংখ্য ভক্তের সমাগম ঘটে।