• রাসপূর্ণিমার পুণ্যস্নানে নেমে গঙ্গার ঘূর্ণিতে তলিয়ে গেল চার নাবালক
    বর্তমান | ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বজবজ: শুক্রবার ভরা পূর্ণিমার দিনে স্নান করতে গিয়ে নোদাখালি থানার বিড়লাপুর জেটিঘাটে গঙ্গায় তলিয়ে গেল চার কিশোর। নিখোঁজ কিশোরদের নাম দীপক মাহাত (১৫), বিভাসকুমার শাহ (১৭) এবং দুই ভাই বিজয় শাহ (১৬) ও রণবীর শাহ (১৪)। এদিন সকাল সাড়ে ৭টার সময় ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে নোদাখালি থানার আইসি। পরে আসেন ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলার কর্তারা। প্রথমে নৌকায় করে তল্লাশি শুরু হয়। পরে নামানো হয় ডুবুরি। পুলিস ও প্রশাসনের কর্তাদের তৎপরতায় পরবর্তীকালে উদ্ধারকাজে হাত লাগায় দমকল, কলকাতা ও বারাকপুর পুলিস কমিশনারেটের বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং কলকাতা রিভার ট্রাফিক পুলিসের লঞ্চ। সারাদিন গঙ্গায় তল্লাশি চালিয়েও তাঁরা ওই চার কিশোরের হদিশ পাননি। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক।


    এদিন রাসপূর্ণিমা থাকায় বিড়লাপুর জুটমিল কোয়ার্টার লাইনের শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা স্নান করতে গিয়েছিলেন গঙ্গার ঘাটে। তখন নদীতে ভাটার টান ছিল। ফলে জলস্তর অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছিল। জল কম থাকায় দীপক মাহাত জলে নেমে বেশ খানিকটা এগিয়ে যায়। তার সঙ্গে আরও একজন ছিল। স্নান করার সময় আচমকা ঘূর্ণির মধ্যে পড়ে যায় তারা। ভেসে যাওয়ার মুখে তারা চিৎকার করলে বাঁচাতে গঙ্গায় ঝাঁপ দেয় প্রতিবেশী দুই ভাই বিজয় ও রণবীর। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার জানত না। ওই ঘূর্ণিতে পড়ে দুই ভাইয়েরও এক অবস্থা হয়। সেই সময় ঘাটে প্রচুর ভিড় ছিল। সেখানেই বসেছিল বিভাসকুমার শাহ। শেষমেশ সেও ঝাঁপ দেয় জলে। উল্টে ওই দুই ভাইয়ের সঙ্গে ভেসে যায় বিভাসও। খানিক বাদেই গঙ্গায় বাণ আসায় তলিয়ে যাওয়া কিশোরদের আর হদিশ মেলেনি।


    পুলিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে পাঁচ কিশোর জলে ভেসে গিয়েছিল। তার মধ্যে একজনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও বাকি বাকি চারজনকে খোঁজে পায়নি উদ্ধারকারী দল। এই ঘটনায় জুটমিল কোয়ার্টার লাইনে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুই সন্তান তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রেমনাথ শাহ। তিনি ঘটনার পর থেকে কেঁদেই চলেছেন। 


    বললেন, আমার মা ও স্ত্রীর সঙ্গেই স্নান করতে গিয়েছিল ওরা। বড় ছেলে বিজয় নবম শ্রেণির ছাত্র। ছোট রণবীর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। প্রেমনাথবাবুর কথায়, আমার দুই ছেলেই নদীতে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। এভাবে আমাদের আর বেঁচে থাকার কোনও অর্থ নেই। তাঁর স্ত্রী ও বৃদ্ধা ঠাকুমা ঘটনার পর থেকে মাঝে মাঝেই অচৈতন্য হয়ে পড়ছেন। এক অবস্থা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বিভাস শাহর বাড়িতে। জেলা পরিষদের সদস্য বাকি শেখ বলেন, উদ্ধারকাজের সময় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। পুলিস ও প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা করছে। শনিবারও তল্লাশি অভিযান চলবে বলে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)