এ বছরের মূল ভাবনায় রয়েছে ছোট টুকরো উপাদান থেকে ইতিহাসের নানা মুহূর্তকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জানা ও বোঝার প্রয়াস। তার জন্য সরকারি মহাফেজখানা বা বনেদি বাড়ির জলসাঘর থেকে গঙ্গায় ভাসমান জলযান, নানা জায়গায় ঘুরে ঐতিহ্য-সন্ধানীরা তুলে আনবেন গণআন্দোলনের সংগ্রামী থেকে ‘প্রান্তিক’ ইউরোপীয় বা উনিশ শতকের শ্রমজীবী মহিলাদের জীবনালেখ্য— বিচিত্র, কৌতূহল-জাগানিয়া নানা বিষয়।
আজ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত শেক্সপিয়র সরণির ডিরেক্টরেট অব স্টেট আর্কাইভস-এ একটি প্রদর্শনী তুলে ধরবে তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস। দেখা যাবে শিল্পী চিত্তপ্রসাদ (ছবি) ও সোমনাথ হোরের কাজ, এ ছাড়া ইনস্টলেশনও। আজ দুপুর দু’টো থেকে সেখানেই ‘তেভাগা উইমেন স্পিক’: কবিতা পঞ্জাবির সঙ্গে মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি ও মহিলা সমিতির কর্মীদের কথালাপ, গান, স্মৃতিকথা-ছোঁয়া আলোচনায় মহাশ্বেতা রায়। অতীতের প্রকাশনা সংস্থা পি এম বাগচি ও আঠারো-উনিশ শতকের কলকাতায় মানচিত্র তৈরির ইতিহাসকে মনে রেখে দেশীয় ও ইউরোপীয় পদ্ধতির বিশ্লেষণ আগামী কাল রবিবার বিকেলে, সে কালের প্রকাশনাপাড়া ঘুরে দেখাবেন ঈপ্সিতা হালদার ও সর্বজিৎ মিত্র।
ঔপনিবেশিক কালে গঙ্গার দু’পারে ছড়িয়ে থাকা বসতিগুলির ইউরোপীয়মাত্রই যে প্রভাবশালী ছিলেন তা নয়। খ্যাতি ও বিত্তের নিরিখে প্রান্তিক ইউরোপীয় মানুষদের কথা জানা যায় সমকালীন বিভিন্ন সূত্র থেকে, তার উদাহরণ শিল্পী ফ্রাঁসোয়া বালথাজ়ার সলভিন্স। আগামী ২০ নভেম্বর গঙ্গাবক্ষে ভাসমান জলযানে সেই গল্প শোনাবেন শর্মিষ্ঠা দে; শোনা যাবে জিপসি-জ্যাজ় ব্যান্ডের গান-বাদনও। অন্য দিকে, ২২-২৩ নভেম্বর বিকেল ৫টায় শোভাবাজার রাজবাড়ির নাটমন্দিরে বিরাটির ‘সমূহ পারফরমার্স কালেক্টিভ’ তুলে ধরবে উনিশ শতকের কলকাতায় বটতলার ছাপা ছবিতে শ্রমজীবী মহিলাদের, এ কী আশ্চর্য! কলিকাতা কলঙ্কিনী; অথবা ছাপের নকশা প্রহসন শীর্ষক প্রযোজনায়। পুরনো কলকাতার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজগতে ঠুংরি ও তার চর্চাকারী বাইজি-তওয়াইফদের আখ্যান তুলে ধরবেন শান্তনু মাঝি সঞ্জনা চক্রবর্তী অসীমবন্ধু ভট্টাচার্য ও সহযোগীরা ‘মেহফিল-এ-ঠুংরি’ নিবেদনে, পাথুরিয়াঘাটার খেলাতচন্দ্র ঘোষের প্রাসাদে ২৪ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায়।
বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ বঙ্গজীবনে নিয়ে এসেছিল দুর্দশা। তা যুঝে গত শতাব্দীর চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙালি মননে আসে এক নবীন সৃষ্টিধারা। তারই প্রতিভূ জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র (ছবি), ঋত্বিক ঘটক। বয়সের ব্যবধান ছিল, সঙ্গীত আর চলচ্চিত্রের ভাষার জুটি বাঁধা থেমে থাকেনি তাতে। তাই পাওয়া গেল মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার-এর মতো চলচ্চিত্রের জাদুমুহূর্ত, ছবি-আলো-সঙ্গীত-অভিনয় সব মিলিয়ে অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। এই ভাবনা থেকেই এ বছর জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের জন্মদিন স্মরণে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতার বিষয় ‘জ্যোতিরিন্দ্র ও ঋত্বিক: আলোর তপস্যা’, বলবেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। আগামী কাল ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন প্রেক্ষাগৃহে, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আয়োজনে। পরিবেশিত হবে জ্যোতিরিন্দ্রের পরিচালনায় ঋত্বিক ঘটকের ছবির গান। প্রকাশিত হবে বই আমাদের নবজীবনের গান (প্রকা: সপ্তর্ষি)।
শিশু দিবস পেরিয়ে গেল দু’দিন আগে। হাসি গান আনন্দ বই খেলা, শৈশবের সঙ্গে নিরন্তর জড়িয়ে যা, তার উদ্যাপন তো হয়েই থাকে এ দিনে। এ বছর আরও একটু বেশি, অন্য রকম কিছু ভাবল বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজ়িয়ম (বিআইটিএম)। কলকাতার স্কুলপড়ুয়াদের জন্য বছরভর কত মেলা উৎসব অনুষ্ঠান প্রদর্শনীর আয়োজন, কিন্তু শহর ও তার আশপাশের স্কুলগুলোর আর্থিক সঙ্গতিহীন ছাত্রছাত্রীদের কথা ভাবা হয় কি তত? ন’টি জেলার কিছু স্কুলের তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণির নির্বাচিত এমনই ১২০ জন পড়ুয়ার তৈরি ৬০টি বিজ্ঞান-নমুনার প্রদর্শনে হয়ে গেল বিজ্ঞান মেলা, গত ১৩-১৪ নভেম্বর। নমুনাগুলির ‘কী ও কেন’ বোঝানোর কাজ করল ছোটরাই। বিজ্ঞান-চেতনার প্রসার, বিজ্ঞান পড়ায় উৎসাহই শুধু বাড়ল না এতে, সবচেয়ে বড় কথা: ওরা বুঝল— ‘আমরাও পারি’।
সন্দেশ খেতে চেয়ে বায়না করায় মা মেরেছেন। অতঃপর নাতির জন্য বারো ঝুড়ি সন্দেশ আনালেন ঠাকুরদা, রামকমল সেন। কলুটোলার সেন পরিবারের বৈভবে মানুষ হয়েও নিজ প্রতিভাকে ধর্ম-সংস্কারের দিকে চালিত করে সেই শিশুই পরে ‘ব্রহ্মানন্দ’ কেশবচন্দ্র সেন। শিক্ষার নানা স্তরে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কালীপ্রসন্ন সিংহ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখকে সঙ্গী হিসাবে পাওয়া মানুষটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল উনিশ শতকের কলকাতার গৌরবময় অধ্যায়। ১৮৬তম জন্মোৎসব উপলক্ষে আগামী ১৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় ১২২এ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ওঁর জন্মস্থান-গৃহে পাঠ সঙ্গীত প্রার্থনায় শ্রদ্ধার্ঘ্য ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের; শম্পা ভট্টাচার্য ও মৈত্রেয়ী রায় কাঞ্জিলাল বলবেন ওঁর জীবন নিয়ে।
১৯৯৬ থেকে নাট্যচর্চা করে চলেছে কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র: প্রযোজনা, পত্রিকা প্রকাশ, আলোচনা, কর্মশালা, নাট্যোৎসব, নানা কর্মকাণ্ডে। তাদের আয়োজনে প্রয়াত আলোকশিল্পী দীপক মুখোপাধ্যায় স্মরণে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতায় এ বারের বক্তা তীর্থঙ্কর চন্দ, ‘আজকের সময়: আজকের থিয়েটার’ নিয়ে বলবেন আগামী ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় দলের নিজস্ব নাট্যভবনে। আগের বছর দু’টিতে বলেছেন সুমন মুখোপাধ্যায় ও দেবশঙ্কর হালদার। ১৫-২৫ ডিসেম্বর ঋত্বিক সদনে তাদের ত্রিশতম নাট্যোৎসব, থাকছে রাজ্যের আঠারোটি প্রযোজনা। প্রসাদ সেন প্রতিষ্ঠিত ‘সোহিনী’র নিবেদনে রবীন্দ্রনাথের শ্যামা নৃত্যনাট্য এই প্রথম উৎসবে। থাকছে কল্যাণী নাট্যচর্চার তিনটি নতুন নাটক: বনে ভাই কত মজাই, মহালয়া এবং কারাদণ্ড।
রাষ্ট্রের সঙ্গে নারীর সম্পর্কে হিংসার স্থান; নারীর দৃষ্টিতে রাষ্ট্র, সমাজ ও ঘর; রাষ্ট্র কোন কোন কৌশলে নারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়— এই বিষয়গুলি শুধু তত্ত্বের আলোয় নয়, দেখা দরকার জনপরিসরের আতশকাচে, বিশেষত এই সময়ে দাঁড়িয়ে। কোভিড-লকডাউনের সময় থেকেই আন্তর্জালে নারী-ইতিহাস বিষয়ে নানা আলোচনার আয়োজন করে আসছে ‘উইমেন’স হিস্ট্রি কনক্লেভ’, এ বার পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তাদের আয়োজন ‘নারী, সহিংসতা ও রাষ্ট্র’ শিরোনামে আলোচনাসভা। সল্টলেক রবীন্দ্রভবনে, রবীন্দ্রভারতী ডিসট্যান্স এডুকেশন অ্যান্ড লার্নিং-এর সভাঘরে আজ দুপুর আড়াইটায়, বলবেন রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায় আফরোজা খাতুন শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত রুচিরা গোস্বামী, সভামুখ্য অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
যখের ধন আর আবার যখের ধন, মনে আছে? হেমেন্দ্রকুমার রায়ের জনপ্রিয় দুই উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে বেরিয়েছিল মৌচাক পত্রিকায়, যথাক্রমে ১৯২৩ ও ১৯৩১ থেকে। দু’টিই পরে গ্রন্থাকারে বেরোয়। তার অনেক পরে, আশির দশকে শুকতারা পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় আবার যখের ধন অবলম্বনে কমিক্স গুপ্তধনের সন্ধানে, চলেছিল পাঁচ বছর ধরে। অ্যাডভেঞ্চার-কাহিনির দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র, দুঃসাহসী বাঙালি যুবক বিমল-কুমারের মুখাবয়বে শিল্পী ময়ূখ চৌধুরী ফুটিয়ে তুলেছিলেন বাঙালির প্রিয় দুই নায়ক উত্তমকুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আদল, পাঠক লুফে নিয়েছিলেন তা। ছোটদের পত্রিকার পাতা থেকে উঠে এসে সেই কাজই এ বার বেরোল ঝকঝকে গ্রাফিক নভেল রূপে— আবার যখের ধন (প্রকা: বুক ফার্ম)। চেহারা ও মেজাজ অক্ষুণ্ণ রাখতে মূল সাদা-কালো প্যানেলগুলি অপরিবর্তিত (ছবি মূল পত্রিকার), পড়েনি ডিজিটাল রং। গত ৯ নভেম্বর হয়ে গেল আনুষ্ঠানিক প্রকাশ।
ঠিক একশো বছর আগে, এমনই এক নভেম্বরে বুয়েনোস আইরেসে প্রথম সাক্ষাৎ রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর (ছবি)— অচিরেই যিনি হয়ে উঠবেন কবিকথায় ‘বিজয়া’, পূরবী কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করবেন কবি তাঁকে। জীবনের এক অস্থির সময়ে রবীন্দ্র-সাক্ষাৎ তাঁকে দিয়েছিল প্রাণের আরাম, তৈরি হয়েছিল এক প্রগাঢ় সংযোগ। সাহিত্যপত্রিকা অন্বেষা এই সাক্ষাতের শতবর্ষ মনে রেখে তৈরি করেছে সাম্প্রতিক সংখ্যা ‘ইতি তোমার বিজয়া’। ওঁরা যোগাযোগ করেছিলেন আর্জেন্টিনার বেশ ক’জন বিদগ্ধ নাগরিকের সঙ্গে, দারুণ সাড়া মিলেছে। বিজয়া প্রসঙ্গে বুয়েনোস আইরেসের হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশনের অধ্যক্ষ, ভারততত্ত্ববিদ গুস্তাভ ক্যানজ়োবার ও আর্জেন্টিনীয় চলচ্চিত্রকার পাবলো সিজ়ারের দু’টি সাক্ষাৎকার বিশেষ আকর্ষণ, কথা বলেছেন আর্জেন্টিনায় প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রেঙ্গরাজ বিশ্বনাথন, কবি ও কূটনীতিক অভয় কুমারও।
লেখালিখি দিয়ে যুদ্ধ থামানো যায় না, কিন্তু সৃজনশীলতা দিয়ে শান্তি-সংহতির বার্তা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি জরুরি। বহু প্রতিষ্ঠান নিবেদিতপ্রাণ এই লক্ষ্যেই, যেমন ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ইন্টারকালচারাল স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ (ইসিসার)। আগামী ১৮-২১ নভেম্বর শহরে তাদের আয়োজনে শান্তি সম্মেলনে আসছেন ভিয়েতনাম বাংলাদেশ জাপান ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া উজ়বেকিস্তান রাশিয়া জার্মানি সার্বিয়া সুইৎজ়ারল্যান্ড ডেনমার্ক মিশর-সহ পনেরোটি দেশের লেখক-চিন্তকরা। হবে আলোচনা, কবিতাপাঠ, গ্রন্থপ্রকাশ, কলকাতার সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময়। অন্য দিকে, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের বিবেকানন্দ হলে আজ দুপুর ৩টেয় এসএনবি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আলোচনা ‘অধ্যাত্মবোধ, নন্দনতত্ত্ব ও প্রেম’ নিয়ে, বলবেন দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী, পিয়াল ভট্টাচার্য-সহ বিশিষ্টজন।