লোকাল হোক বা দূরপাল্লার, ট্রেনের লেডিস কামরায় পুরুষদের ওঠা নিষেধ। এটা প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু লোক লেডিস কামরায় নানা কারণে ওঠেন। সে জেনেই হোক বা না বুঝে। এবার লেডিস কামরায় পুরুষ যাত্রীদের ওঠা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিল পূর্ব রেল। প্রচুর যাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সঙ্গে আদায় করা হয়েছে কয়েক হাজার টাকা জরিমানা।
পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ১ নভেম্বর থেকে থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত রেল সুরক্ষা বাহিনী (RPF) কর্তৃক মহিলা কামরায় পুরুষদের অনধিকার প্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। ১৯৮৯ সালের রেল আইনের ১৬২ ধারা অনুযায়ী, অনুযায়ী মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় বা স্থানে পুরুষ যাত্রীদের অনুমোদনহীন প্রবেশ ও দখল বেআইনি। এর জন্য জরিমানা বা শাস্তি বা দুটোই হতে পারে। মহিলা কামরায় কোনও পুরুষ যাত্রী প্রবেশ করলে বা যাতায়াত করলে তাঁকে জরিমানা করা হয়। রেল কর্মচারীর নির্দেশে তাঁকে কামরা থেকে বের করে দেওয়া হবে এবং তার টিকিট বাজেয়াপ্তও হতে পারে। দূরপাল্লার ট্রেনে মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বা বার্থ কোনও পুরুষ যাত্রী দখল করলে এবং রেল কর্মচারীর অনুরোধ সত্ত্বেও তা খালি না করলে তাঁর বিরুদ্ধেও উল্লিখিত শাস্তি কার্যকর হবে।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ১ থেকে ১২ নভেম্বর অভিযান চালানো হয়েছে পূর্ব রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে। হাওড়া বিভাগে ১২৭ জনকে মহিলা কামরায় ওঠার কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ টাকা। শিয়ালদা ডিভিশনে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৯৪ জনকে। আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ২৪ হাজার ৪০০ টাকা। মালদা ডিভিশনে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৩ জনকে। মোট ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
আসানসোল ডিভিশনে ১৫৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২৮ হাজার ৮০০ টাকা। অর্থাৎ মোট ৫১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে শুধু পূর্ব রেলে। মোট জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা।
গত জুলাই মাসে একটি জনস্বার্থ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। রায় অনুযায়ী, লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরা, লেডিস স্পেশালে পুরুষ যাত্রীরা ওঠার চেষ্টা করলেই কড়া জরিমানার মুখে পড়তে হবে। এই নির্দেশের ফলে মহিলাদের যাত্রা আরও সুরক্ষিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মহিলা কামরায় পুরুষ যাত্রীদের অনুপ্রবেশ ও দুর্ব্যবহার সম্পর্কে অভিযোগ জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন পিয়েতা ভট্টাচার্য নামে এক আইনজীবী। তাঁর অভিযোগ ছিল, রেলের কাছে একাধিকবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষ আদালতে পাল্টা দাবি করে যে, সিনিয়র ডিভিশনাল সিকিউরিটি অফিসারের কাছে অভিযোগ জানানো উচিত ছিল। মামলাকারী সঠিক জায়গায় অভিযোগ জানাননি বলেই সমস্যার সমাধান হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, তারা নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।