• বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটিতে অনুব্রত, শেষপর্যন্ত ক্ষমতা খর্বই হল কেষ্টর!
    ২৪ ঘন্টা | ১৭ নভেম্বর ২০২৪
  • প্রসেনজিত্ মালাকার: জেল থেকে ফেরার পর বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কাজল শেখের সংঘাত বাড়ছিল। এমনটাই মনে করছিল রাজনৈতিক মহল। শনিবার বীরভূমে তৃণমূল কোর কমিটির বৈঠকের পর সেই সংঘাত খানিকটা মিটল বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ জেলা সভাপতি হিসেবে কোর কমিটিতে যুক্ত হলেন অনুব্রত মণ্ডল । অর্থাৎ, ৬ থেকে বেড়ে বীরভূম জেলার কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা হল ৭ জন৷  আজ  প্রায় ১ ঘন্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানালেন কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। কাজল শেখকে পাশে বসিয়ে কেষ্ট-কাজল দ্বন্দ্বের 'যবনিকা হল' বললেন আহ্বায়ক। এবার থেকে প্রত্যেক কোর কমিটির বৈঠকে কোর কমিটির সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অনুব্রত ৷ এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছেন কেষ্ট-কাজল।

    শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটেয় অনুব্রত মণ্ডলকে মধ্যমণি করে শুরু হয় তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক। প্রায় ১ ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কোর কমিটির আহ্বাক বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি জানান, কোর কমিটির অন্তর্ভুক্ত হলেন অনুব্রত মণ্ডল। এবার থেকে সব কোর কমিটির বৈঠকে মেম্বার হিসাবে উপস্থিত থাকবেন অনুব্রত৷ এছাড়া, এই বৈঠকে মধ্যদিকে এতদিন ধরে চলে আসা কাজল-কেষ্ট দ্বন্দ্বের 'যবনিকা হল'। কাজল শেখকে পাশে নিয়েই এমনটাই জানান বিকাশ রায়চৌধুরী। এছাড়া, বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখ উভয়ই এক সঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছেন। প্রতি মাসে একটি করে কোর কমিটির বৈঠক হবে৷ একটি মহকুমায় বৈঠক হবে। পরবর্তী বৈঠক ১৫ ডিসেম্বর রামপুরহাটে হবে৷ জানা গিয়েছে, কোর কমিটির বৈঠকে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব রেখেছেন কাজল শেখ, অভিযোগ তুলেছেন একাধিক৷ কাজল শেখের প্রস্তাবগুলি মেনে নেওয়া হয়েছে।

    সাংবাদিক বৈঠকে কাজল শেখ বলেন, "আমি আগেও বলেছি, আজও বোলপুরে তৃণমূল পার্টি অফিসে বসে বলছি অনুব্রত মণ্ডল আমার রাজনৈতিক গুরু, আমার অভিবাবক। আমি তাঁর হাত ধরে রাজনৈতিতে প্রবেশ করেছি৷ আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই৷ কোর কমিটির বৈঠকে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার পরিকল্পনা হয়েছে।"

    অনুব্রত মণ্ডল জেলায় ফেরার পর প্রশ্ন ওঠে জেলা সভাপতি হিসেবে অনুব্রত মণ্ডলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নাকি কোর কমিটির সিদ্ধান্ত শেষ কখা বলবে। এদিন কোর কমিটিতে বৈঠকের নেওয়া হ অনুব্রতকে। ফলে কোর কমিটির সিদ্ধান্তই দল পরিচলানার ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে। সভাপতি পদেও থাকবেন অনুব্রত। তবে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে একার ক্ষমতা থাকছে না কেষ্টর। ফলে অনুব্রত ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব হল।

    দু'বছর পর গোরু পাচার ও আর্থিক তছরুপের মামলায় জামিন পেয়ে বীরভূমে ফিরেছেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর অবর্তমানে দলের সাংগঠনিক হাল ধরতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন৷ অনুব্রত ফেরাও পরেও কোর কমিটি বিদ্যমান। এই কোর কমিটিতে রয়েছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়জুল হক ওরফে কাজল শেখ, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী ও তৃণমূল নেতা সুদীপ্ত ঘোষ।

     

    গত ২ মাস কোর কমিটির কোন বৈঠক হয়নি বলে সোচ্চার হয়েছিলেন অনুব্রতর যুযুধান হিসাবে পরিচিত কাজল শেখ। তারপরেই দেখা গেল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোর কমিটির বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেন। সেই বৈঠক অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে করতে হবে, এমনও নির্দেশ দেন নেত্রী৷ ফলে অনুব্রতর প্রত্যাবর্তনে এই প্রথম কোর কমিটির বৈঠক। অনুব্রতকে মধ্যমণি করে এই বৈঠক শুরু হয়। তাই বৈঠক ঘিরে টানটান উত্তেজনা ছিলেন দলের অন্দরে৷

    বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, "অনুব্রত মণ্ডল কোর কমিটির সদস্য হলেন । কোর কমিটির সদস্য তাঁকে নিয়ে ৭ জন৷ অনুব্রত মণ্ডল সবাইকে নিয়ে চলার বার্তা দিয়েছেন৷ আর কাজল-অনুব্রত দ্বন্দ্ব ছিল না। আজ তার যবনিকা হল৷"

     সূত্রের খবর জানা গিয়েছে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোর কমিটির আহবায়ক বিকাশ রায় চৌধুরীকে ফোন করেছিলেন। আর সেই নির্দেশ মোতাবেক এবার কোর কমিটিতে নেওয়া হল অনুব্রত মণ্ডলকে।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)