ভৈরববাবার মাহাত্ম্য, বিগ্রহ ও পুজোর উপকরণ দাতাদের অপেক্ষা ৬০ বছর!
বর্তমান | ১৭ নভেম্বর ২০২৪
অভিষেক পাল, বহরমপুর: চলতি বছর মানত করলে অপেক্ষা করতে হবে ৬০ বছর। অর্থাৎ, ২০৮৪ সালে গিয়ে পুজো দিতে পারবেন মানতকারী! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই ‘মিথ’ বহরমপুরের সৈদাবাদ নিমতলাপাড়ার ভৈরব বাবার পুজোয়। ফলে, প্রতিমা ও একদিনের পুজোর খরচ দেওয়ার জন্য দীর্ঘ লম্বা লাইন। সেই লাইনের শেষ কোথায় কেউ জানে না। আজ যে ভূমিষ্ঠ হল, তার হয়ে মা-বাবা মানত করলে সেই শিশু বৃদ্ধ বয়সে গিয়ে পুজো দিতে পারবে।
শনিবার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভৈরব পুজো। কোথাও বোল্ডার বাবা, সাঁকো বাবা, প্রেম বাবা, আবার কোথাও হঠাৎ বাবা, চটা বাবা, পেঁপে বাবা, গলি বাবা নামে পূজিত হচ্ছেন ভৈরব। তবে সব থেকে বেশি উন্মাদনা ভৈরবতলার বড় ভৈরবের পুজো এবং সৈদাবাদ নিমতলার নিম বাবার পুজো ঘিরে। প্রতিবছর হাজার হাজার মা-বোনেরা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে উপোস করে পুষ্পাঞ্জলি দেন। এদিন দুপুর থেকেই ভৈরবতলায় পুণ্যার্থীদের লম্বা লাইন। কার্তিক সংক্রান্তিতে বহরমপুর শহরজুড়ে ভৈরব পুজো উপলক্ষ্যে একেবারে উৎসবের আমেজ। কোথাও কোথাও এক একটি মূর্তির উচ্চতা দোতলা বাড়ির সমান। আগামী এক সপ্তাহ ধরে চলবে পুজো। তারপর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন হবে ভাগীরথী নদীতে। আগামী রবিবার বড় ভৈরব এবং নিম বাবার বিসর্জন হবে। নিমবাবা পুজো কমিটির সভাপতি চন্দন দাস বলেন, ‘আমাদের এই ভৈরব খুব জাগ্রত। শনিবার বিকেলে ভৈরব বাবাকে থানে তোলা হয়েছে। তারপর পুজো শুরু হয়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানে পুজো দিতে। বাবার মাহাত্ম্য এতটাই জাগ্রত যে, আগামী ৫৯ বছর পর্যন্ত বাবার মূর্তি দেওয়ার জন্য ভক্তরা মানত করে রেখেছেন। কারা কোন বছর এই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটাও আমরা তালিকা প্রকাশ করে জানিয়েছি।’
গলিবাবার পুজো উদ্যোক্তা দীপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা ছোটরা প্রতিবছর এখানে পুজোর আয়োজন করি। সরু গলির মধ্যে পুজো হয় বলে আমাদের এই পুজোর নাম গলিবাবা। ছোট বড় প্রচুর ভৈরবের পুজো হয় এই সময়। গোটা শহর জুড়েই একেবারে উৎসবের পরিবেশ। প্রতিটি জায়গাতেই বিভিন্ন রকমের ভোগের ব্যবস্থা থাকে।’
পুণ্যার্থী তথা শহরের প্রবীণ বাসিন্দা অশোক দাস বলছিলেন,‘ কয়েক শো বছর ধরে প্রাচীন ভৈরবের পুজো হয়। এবারও পুজো ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা। ভৈরব পুজোর মূল আকর্ষণ শোভাযাত্রা। প্রতি বছর শহর পরিক্রমায় পথের দু’ধারে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়।’ শহরের অধিকাংশ পুজোগুলি ছোট ছোট গলি পথেই হয়ে থাকে। হাজার হাজার ভক্ত অনেক রাত পর্যন্ত ঠাকুর দর্শন করেন। পুজোর দিন থেকে পরবর্তী দিনগুলিতে পরপর ভোগ খাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে সব খানেতে। শহরের মানুষও মাটিতে বসে প্রসাদ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন।