নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ট্যাবের জালিয়াতির ঘটনায় পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দায়ের করা এফআইআর কপি পাঠানো হল সিআইডির কাছে। গত ৩০ অক্টোবর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক) শুভাশিস মিত্র তমলুক থানায় এফআইআর করেছিলেন। তাতে চারটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। শনিবার সিআইডি অফিসাররা সেই এফআইআরের কপি তমলুক থানা থেকে সংগ্রহ করেছেন। ট্যাবকাণ্ডে এডিজি সিআইডি-২ বিশাল গর্গ এবং এডিজি সাইবার হরিকিষণ কুসুমাকারের নেতৃত্বে যৌথ মনিটরিং টিম গড়েছে রাজ্য। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এফআইআরের কপি এবং কেসের অগ্রগতি বিষয়ক রিপোর্ট নেওয়া হল।
‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব কেনার টাকা জালিয়াতির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিসের হাতে পাঁচজন ধরা পড়েছে। তারমধ্যে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকেই চারজনকে ধরা হয়েছে। শনিবার সকাল ৭টা নাগাদ নুর আলম নামে একজনকে চোপড়া থেকে তমলুক থানায় আনা হয়। সকাল ১১টা নাগাদ তাকে তমলুক সিজেএম কোর্টে পাঠিয়ে দেয় পুলিস। মালদহের বৈষ্ণবনগরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিএসপি(কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট) কর্ণধার সুব্রত বসাককে ম্যারাথন জেরা করেছে পুলিস। ওই ব্যক্তি মাত্র ৫০-৬০ টাকার বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট নম্বর ভাড়া দিয়েছিল। সাইবার প্রতারকরা ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর নিয়ে কী করবে সে সম্পর্কে সুব্রতকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল বলে ধৃত পুলিসকে জানিয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্টে পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা ঢুকেছে বলেও সে জানত না বলে দাবি করেছে। এর আগেও তার কাছ থেকে অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগে কখনও ট্যাব কাণ্ডের মতো হইচই হয়নি। তাই মাত্র ৫০-৬০ টাকার বিনিময়ে সে ওইসব অ্যাকাউন্ট ভাড়ায় দিয়েছিল।
চোপড়া থেকে মোট চারজন এবং মালদহ থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করার পর ম্যারাথন জেরা করছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিস। ধৃতরা আগে জামতাড়ায় গিয়েছিল কিনা সেসম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। জানা গিয়েছে, জামতাড়া গ্যাংয়ের লোকজনের থেকেই চোপড়ার ধৃতরা ট্রেনিং নিয়েছে। এর আগে চোপড়ার এক যুবক সাইবার জালিয়াতি করে কেরল রাজ্যের সরকারি প্রকল্পের টাকা লোপাট করেছিল। ওই রাজ্যের পুলিস তাকে গ্রেপ্তারও করেছিল। সেই যুবক চোপড়ার বহু যুবককে সাইবার জালিয়াতির পাঠ দিয়েছে। জামতাড়া গ্যাংয়ের মডেল অনুসরণ করে কাজ করত চোপড়ার ওই সাইবার প্রতারকরা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিস তাদের জেরা করে জেনেছে, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, ঝাড়খণ্ডেও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা হাতিয়েছে চোপড়া গ্যাং। সরকারি উপভোক্তাদের নামে জায়গায় ভুয়ো নাম ও অ্যাকাউন্ট নম্বর এন্ট্রি করে সরকারি টাকা লুট করা হয়েছে। তবে, ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাব জালিয়াতির মতো ঘটনা নিয়ে হইচই হয়নি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট ২৩০জন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই পড়ুয়ারা ট্যাব কেনার টাকা থেকে বঞ্চিত বলে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন। তাঁদের অ্যাকাউন্টে ট্যাব কেনার টাকা ঢুকবে। জেলার চারটি মহকুমাতেই ট্যাব জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।