• বরো চেয়ারম্যানকে খুনের চেষ্টা, ধৃত আরও ২, নেপথ্যে সুশান্ত ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীই
    বর্তমান | ১৭ নভেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘরের শত্রু বিভীষণ! শুক্রবার ভরসন্ধ্যায় কসবায় বাড়ির সামনেই খুনের চেষ্টা হয়েছে বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষকে। সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আসল ষড়যন্ত্রকারীকে চিহ্নিত করল লালবাজার। তিনি স্বয়ং সুশান্ত ঘোষেরই ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী। পুলিস সূত্রে খবর, সেই ব্যবসায়ী আবার দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার অন্যতম উঠতি গ্যাংস্টার হিসেবে পরিচিত। আপাতত এই মামলায় গোয়েন্দাদের স্ক্যানারে সেই গ্যাংস্টার-ব্যবসায়ী। লালবাজারের দাবি, বিহারের বৈশালী থেকে আসা তিন আততায়ীকে শহরে শেল্টার দেওয়া থেকে শুরু করে ঘটনাস্থল রেকি এবং অ্যাকশন—সবটাই হয়েছে তাঁর অঙ্গুলিহেলনে। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে সুশান্তের অবস্থান সম্পর্কে আততায়ীদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেন সেই ‘বিভীষণ’। রাতেই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁর নাম প্রকাশে নারাজ পুলিস।


    শনিবারই বর্ধমানের গলসি থেকে এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত আফরোজ খান ওরফে গুলজারকে গ্রেপ্তার করেছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। ধৃত ব্যক্তি আনন্দপুরের বাসিন্দা। পুলিসের দাবি, বিহার থেকে আসা আততায়ীদের কাছে ‘ইকবাল’ নামে পরিচয় দিয়েছিল সে। ঘটনার পর শুক্রবার রাতেই বিহারের দুষ্কৃতী যুবরাজ সিংকে পাকড়াও করেছিলেন তদন্তকারীরা। এদিন ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক ট্যাক্সিচালককেও। নাম আহমেদ খান। যুবরাজ ও আহমেদকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত। এখনও ফেরার তিন অভিযুক্ত। এদিন আদালতের বাইরে গুলজার দাবি করেছে, আলি নামে সুশান্ত ঘনিষ্ঠ এক প্রোমোটারের জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই এই প্ল্যানের সূত্রপাত।


    পুলিসের দাবি, মাসখানেক আগে বিহারের বৈশালী থেকে এক অভিযুক্ত হাজির হয় শহরে। গুলজারের সাহায্যে তিলজলা এলাকায় বাড়িও ভাড়া নেয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে সুশান্ত ঘোষের বাড়ি, পার্টি অফিসে রেকি চালাত সে। চূড়ান্ত অ্যাকশনের জন্য ডেকে পাঠানো হয় যুবরাজ সহ বিহারের আরও দুই আততায়ীকে। বৃহস্পতিবার রাতে তারা হাওড়া স্টেশনে নামে। গঙ্গা পেরিয়ে বাবুঘাটে আসে। আহমেদের ট্যাক্সি চেপে সেখানে হাজির হয় প্রথম আততায়ী। তারপর তিনজনে পৌঁছে যায় লেকটাউনে যশোর রোডের একটি ফ্ল্যাটে। ঠিকানা ১৩৪, কালিন্দী রোড। সেটি বরো চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর এক বন্ধুর ফ্ল্যাট। 


    শুক্রবার দুপুরে পার্ক সার্কাসে চার নম্বর ব্রিজের উপর তিন আততায়ীকে নামিয়ে দেয় আহমেদ। তাদের বাইকে চাপিয়ে তিলজলায় একটি গলিতে নিয়ে যায় গুলজার। সেখানেই নতুন নাইন এমএম পিস্তল হস্তান্তর করা হয় যুবরাজকে। সঙ্গে জোড়া ‘লোডেড’ ম্যাগাজিন। যুবরাজ জেরায় জানিয়েছে, দু’দফায় হামলার ছক ছিল। প্রথমে স্কুটারে চেপে যুবরাজই গুলি চালাবে। কোনও কারণে ফস্কে গেলে পিছনে আহমেদের ট্যাক্সিতে থাকা গুলজারের টিম ‘শট-ডাউন’ করবে সুশান্তকে। কিন্তু পিস্তলের লক না খোলায় বানচাল হয়ে যায় প্ল্যান।


    এই ঘটনায় পুলিসকে কড়া সুরে বিঁধেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘এনাফ ইজ এনাফ। অন্য রাজ্যের ক্রিমিনাল বাংলায় ঢুকে এসব করছে। বারবার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন অস্ত্র প্রবেশ আটকাতে। পুলিসকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এদিন বিকেলে সুশান্ত ঘোষের বাড়ি গিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করেন মেয়র। বাড়ানো হয়েছে বরো চেয়ারম্যানের নিরাপত্তাও।


     
  • Link to this news (বর্তমান)