• প্রাথমিক কিস্তি মেটানো গেলেও পরে কী হবে
    আনন্দবাজার | ১৭ নভেম্বর ২০২৪
  • আবাস প্রকল্পে মোট অর্থের ৬০% অর্থ দেয় কেন্দ্র। বাকি ৪০% থাকে রাজ্যের ভাগে। গত প্রায় দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ থাকায় নিজস্ব ভাগের বিপুল অর্থও খরচ করতে হয়নি রাজ্যকে। তাই প্রশাসনের একাংশের মতে, আগামী মাস থেকে আবাস-উপভোক্তাদের প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার প্রশ্নে সেই অর্থই নবান্নের কাছে সবচেয়ে বড় ভরসা। আবার অন্য একটি অংশের বক্তব্য, যে ভাবে রাজ্যের খরচের বোঝা বাড়ছে, তাতে প্রাথমিক ধাক্কা কাটানো গেলেও প্রকল্পের সামগ্রিক আর্থিক চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে।

    পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, ‘‘এ বারের বাজেটে রাজ্যের ভাগের ৪০% টাকা ধরাই আছে। দফতরের বাজেট থেকেই প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া যাবে। দরকার হলে কিছুটা আরও বরাদ্দ করা যায়।’’

    গত প্রায় দু’বছর ধরে আবাস প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ থাকায় নিজেরাই সেই প্রকল্পের উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির টাকা দেবে বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রায় ১১ লক্ষ উপভোক্তা সম্বলিত তালিকাকে অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই তালিকা ধরে আবাস প্রকল্পের উপভোক্তাদেরবাড়ির টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য। এক-একজন উপভোক্তা মোট পাবেন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে। আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সেই হিসাবে ১১ লক্ষের জন্য প্রকল্পের মোট বরাদ্দ হওয়ার কথা প্রায় ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৬০ শতাংশের হিসাবে কেন্দ্রের দেওয়ার কথা প্রায় ৭৯২০ কোটি টাকা। রাজ্যের ভাগে প্রায় ৫২৮০ কোটি টাকা আসার কথা ৪০ শতাংশের হিসাবে।

    আবাসের উপভোক্তা তালিকা অনুমোদন করেও যে হেতু কেন্দ্র এত দিন পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়নি, তাই রাজ্যকেও তার ভাগের টাকা দিতে হয়নি প্রকল্পে। ফলে খাতায়কলমে ৫২৮০ কোটি টাকা থাকার কথা রাজ্যের। আধিকারিক মহলের অনুমান, সেই বরাদ্দই ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া প্রথম কিস্তির টাকা দেওযার কাজে ব্যবহার হবে। তবে ১১ লক্ষ উপভোক্তা (এখনও তালিকার যাচাই চলছে) ধরে নিলে প্রথম কিস্তির জন্য রাজ্যের খরচ হওয়ার কথা প্রায় ৬৬০০ কোটি টাকা (কারণ, প্রথম কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। পরবর্তী দু’টি কিস্তি যথাক্রমে ৪০ এবং ২০ হাজার টাকা করে)। সে ক্ষেত্রে চলতি আর্থিক বছরেই অতিরিক্ত ১৩২০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকে।

    এক আধিকারিকের কথায়, “অতিরিক্ত এই অর্থের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বিভিন্ন ভাবে। পঞ্চায়েত দফতরের বরাদ্দ, অন্যান্য খাতের খরচ কেটে অথবা বাজার থেকে ধার করে টাকা জোগাড়ের সুযোগ রয়েছে রাজ্যের কাছে। তবে প্রথম কিস্তিতে ৬০% না ৫০% দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত হবে শীঘ্রই।” অবশ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘রাজস্ব খরচ এবং নগদের ব্যবস্থাপনা সঠিক ভাবে করা গেলে সমস্যা নেই। এখনও তো আমরা বাজে খরচে রাশ টেনে রেখেছি।’’ ঋণ নেওয়ার প্রশ্নে তাঁর জবাব, ‘‘এফআরবিএম-এর বাইরে গিয়ে তো ধার করা সম্ভব নয়! গত আর্থিক বছর যতটা আমাদের ঋণ নেওয়ার সীমা ছিল, ততটা নেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, বাকি থাকা সেই অর্থ এই আর্থিক বছরে যোগ হয়ে গিয়েছে। ফলে ঋণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা থাকে, যতটা সম্ভব কম ধার করা।’’

    আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, এখন ২০২৪-২৫ আর্থিক বছর চলছে। ডিসেম্বরে প্রথম কিস্তির অর্থ দিলে এই বছর শেষ হতে হাতেথাকবে তিন মাস (৩১ মার্চ আর্থিক বছর শেষ হয়)। তার মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ না দেওয়ারই সম্ভাবনা। ফলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কিস্তির অর্থ (সম্মিলিত ভাবে আরও ৬৬০০ কোটি টাকা) আগামী আর্থিক বছরে (২০২৫-২৬) তা দেওয়ার সুযোগ থাকবে রাজ্যের হাতে।

    তবে এ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেবে সরকার যা দাবি করেছে, তাতে আয় এবং ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় সমান। বরং ব্যয় সামান্য কিছুটা বেশি। এই অবস্থায় ৬৬০০ কোটি টাকার সংস্থান নতুন করে করতে হলে অন্য খাতে হাত দিতে হবে। বিশ্লেষকদের একাংশের আশঙ্কা, সে ক্ষেত্রে পরিকাঠামো খাতে টান পড়তে পারে। যা অর্থনীতির পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)