জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কাউন্সিলরের উপর হামলার পেছনে ঠিক কী কারণ লুকিয়ে? সেই প্রশ্ন ঘিরে তৈরি হয়েছে নানান জল্পনা। ব্যক্তিগত কারণ নাকি রাজনৈতিক আক্রোশ? নাকি জমি বিবাদ কসবার ঘটনা দানা বেঁধেছে নানান প্রশ্নের। এরই মাঝে নাম জড়াল হায়দার আলি নামে এক প্রোমোটারের। ওই প্রোমোটারের সঙ্গে জমি বিবাদ ছিল ধৃত আফরোজ ওরফে গুলজারের। সেই জমি বিবাদ নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলরের সঙ্গে কোন রকমের যোগ রয়েছে নাকি তারই তদন্তে কসবা পুলিস। শুক্রবার কলকাতার পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে খুনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। হাতেনাতে ধরা পড়েন যুবরাজ সিংহ। যদিও যুবরাজ পুলিসের কাছে দাবি করে, কাউন্সিলরকে ভয় দেখানোর জন্য তাঁকে সুপারি দেওয়া হয়েছিল, মারার জন্য নয়। কিন্তু ঠিক উল্টো দিকে গুলজারের দাবি ভয় দেখানো নয়, মারার জন্যই পাঠানো হয়েছিল যুবরাজকে। যুবরাজ ছাড়াও স্কুটারচালক যিনি ছিলেন তার কাছেও একটি বন্ধুক ছিল।
পুলিসের জেরায় গুলজার জানিয়েছে, এর আগেও দু'বার মারার প্ল্যান করেছিলেন তিনি। কিন্তু যাদের ডাকা হয়েছিল তারা কেউই সাহস করে উঠতে পারেনি। এবং সুশান্ত ঘনিষ্ঠ হায়দার তাঁর জমি বিক্রি করে দিয়েছিল। ঘটনাচক্রে আরও একজনের নাম জড়িয়েছে এই ঘটনায় তিনি হলেন সুশান্ত অনুগামী হায়দার। হায়দার তিনি জানান, 'যে দু'হাজার স্কোয়ার ফিট জমি ঘিরে সমস্যা হলে। গুলজারের তো আমাকে মারা উচিত। কেন দাদার উপর হামলা করবে? কারণ দাদা আমাকে ভরসা করে এই জায়গায় রেখেছে। দাদা এখানে সপ্তাহে একদিন থাকে আমি গোটা সপ্তাহ থাকি। সমস্ত আপডেট দিতে থাকি দাদাকে। এর পেছনে বিশাল বড় প্ল্যান রয়েছে।'
শুধু দু'হাজার স্কোয়ার ফিটের জমি ফ্ল্যাট দখল নিয়ে গুলজার ও হায়দারের বিবাদের জেরে কাউন্সিলারকে খুনের প্ল্যান করে ফেলবে? সূত্র অনুযায়ী, গুলশনকলোনীর একটি জলাভূমি পুরোটা ভরাট করার নিয়েও আক্রোশ তৈরি হয়েছিল সুশান্ত ও এলাকার জমির কারবারিদের। এই জলাভূমি ভরাট নিয়ে দ্বন্দ সুশান্ত ও এলাকার জমি কারবারি জুলকারের। জুলকারের দাবী এই এলাকার যাবতীয় প্রোমোটিং ও জবরদখল সামলাতো সুশান্ত ঘনিষ্ঠ হায়দার আলি।
বাইপাস লাগোয়া এই গুলশন কলোনীকে দেখে মনে হবে যেন এক বিচ্ছিন্ন এলাকা। সার দিয়ে পর পর গড়ে উঠেছে বহুতল। বিশাল জলাভূমির একটা বড় অংশ বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। চারদিকে কাঁচাটাকার অবৈধ কারবার। হায়দারকে দিয়ে এই গুলশনকলোনী সামলাতেন সুশান্ত, এমনই দাবী এলাকার জমি কারবারী জুলকরের। জুলকর- হায়দরের অ্যান্টি গ্রুপ। আফরোজ বা গুলজারের যে দু'হাজার স্কোয়ার ফিট ফ্ল্যাটটি হায়দার দখল করেছিল সেটির মালিকও ছিল এই জুলকর। ২০১২ সালে বিক্রি করেছিলেন জুলকর। এই জুলকর বর্তমানে তৃণমূল মাইনরিটি সেলের স্টেট সেক্রেটারি।
যদিও গোটা ঘটনায় জুলকার জানান, 'হায়দার হচ্ছে আমাদের পৌরপিতার খাস লোক। এই গোটা এলাকার বিল্ডিং দেখছেন, টাকা তোলা সবকিছু হায়দার করে। জমির সমস্ত দেখভাল করে হায়দার।' যদিও গোটা ঘটনায় ১৩ দিনের পুলিসি হেফাজত হয়েছে গুলজারের। যদিও এই কসবাকাণ্ডে একটা নাম প্রথম থেকেই উঠে আসে সেটা হল 'ইকবাল'। এই নাম নিয়ে বারবার ধন্দে ছিলেন পুলিস। যুবরাজ জেরায় জানিয়েছিল আফরোজ ইকবাল। কিন্তু আফরোজ দাবি করেছেন, ইকবাল বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা। সুশান্তকে খুন করতে প্রথমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। পুলিস এখন পরিচয় জানার চেষ্টা করছে 'গুমনাম' ইকবালের।