নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: পাঁচিল দেওয়া নিয়ে বিবাদ ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল কুলটি থানার মনবেড়িয়া। রবিবার দুপুরে এঘটনায় রাস্তার উপর লাঠি, তরোয়াল নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এমনকী, শূন্যে দুই রাউন্ড গুলি চালানো হয়। তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় বরাকর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিশাল পুলিস বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার পর স্থানীয়রা বরাকর-কল্যাণেশ্বরী রাস্তা অবরোধ করে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন। পরে পুলিস আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তিনজনকে গ্রেপ্তার করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ডিসি সন্দীপ কাররা বলেন, জমি বিবাদ ঘিরে দু’টি পরিবারের মধ্যে অশান্তি হয়েছে। গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। আমরা এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি।
আসানসোল পুরসভার ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের মনবেড়িয়ায় নঈম আক্তারের সঙ্গে পড়শি মহম্মদ শাহিদের জমি বিবাদ চলছিল। এদিন নঈম আক্তারের পরিবার একটি জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দিচ্ছিল। মহম্মদ শাহিদের পরিবারের দাবি, ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তারা পাঁচিল দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলে। এরপরই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। মুহূর্তের মধ্যে বরাকর-কল্যাণেশ্বরী সড়ক রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। রাস্তার উপরই দুষ্কৃতীরা তরোয়াল হাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মহম্মদ শাহিদ বলেন, আমার পরিবারের লোকেদের রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছে। তিনজন গুরুতর আঘাত পেয়েছে। ওরা গুলিও চালিয়েছিল। এরপরই বিশাল পুলিস বাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে। নঈম আক্তারের পরিবারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করেন। সন্ধ্যার মধ্যে পুলিস তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, নঈম আক্তারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। সেটি ব্যবহার করা হয়েছিল। আগ্নেয়াস্ত্র, তলোয়ার বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
দুই পরিবারের মধ্যে কেন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হল তা নিয়ে বেশকিছু কারণ সামনে আসছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দু’টি পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছে। এক বছর আগে আট বিঘা জমি নিয়ে একবার বিবাদ হয়। তখনও জমি থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। পুলিস এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারও করে। জানা গিয়েছে, নঈম চামড়ার কারবার করে। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় এলাকায় তার প্রভাব রয়েছে। যদিও তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মারপিটের ঘটনার পর তার বাড়িতে আক্রমণ করা হচ্ছিল। তখনই প্রাণে বাঁচতে গুলি চালানো হয়েছে।
বারবার অশান্তির কারণে খবরের শিরোনামে থেকেছে কুলটি থানার মনবেড়িয়া এলাকা। বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এই এলাকায় বারবার গোরু পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এলাকায় রয়েছে চামড়ার কারবারও। ২০১৯সালে এই এলাকাতেই খুন হয়েছিলেন তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলার খালিদ। খালিদকে খুন করার পিছনেও প্রতিবেশীদেরই যোগ ছিল। শুধু মনবেড়িয়া নয়, কুলটি থানার চিনাকুড়ি, সাঁকতোড়িয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে শ্যুটআউট, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে দাদাগিরি দেখা যাচ্ছে তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে এলাকাবাসীর। এর আগে কুলটি থানার সাঁকতোড়িয়া এলাকাতেই প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাদের জেরে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায় এক সাধুবাবাকে। কুলটির মনবেড়িয়াতে ঘটনাস্থলে পুলিস। -নিজস্ব চিত্র