নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রবিবারের সকাল। মুকুন্দপুরের মুকুন্দভবন এলাকা জমজমাট। সেখানেই রয়েছে সোনার দোকান ‘গীতাঞ্জলি জুয়েলার্স’। সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখানে ঢুকলেন এক যুবক। তখন দোকানে ছিলেন মালিক সঞ্জয় সরকার ও তাঁর এক কর্মী। স্বর্ণ বিপণিতে ঢুকে আর পাঁচজন ক্রেতা যেভাবে দরদাম করেন বা পছন্দের গয়না খোঁজেন, সেভাবেই শুরু হয়েছিল কথাবার্তা। তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ধুন্ধুমার! ‘ধর ধর’ বলে চিৎকার করে যুবকের দিকে ছুটে গেলেন দোকানের মালিক। আচমকা যুবক প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে সব্জি কাটার ছুরি বের করে সটান চালিয়ে দিলেন সঞ্জয়বাবুর গলায়। ততক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে সেখানে। হাতেনাতে ধরা পড়ে যান যুবক। বেধড়ক গণপিটুনিতে কার্যত আধমরা অবস্থা হয় তাঁর। হাসপাতালে পাঠানো হয় জখম স্বর্ণ ব্যবসায়ীকেও। লুটের চেষ্টা ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে যুবককে গ্রেপ্তার করে পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিস। তারা জানিয়েছে, ধৃতের নাম দীপঙ্কর পাল। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসাপাতালের মেল নার্স তিনি। সকালে ভরা বাজারে এমন দুঃসাহসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে তাজ্জব বনে যান সবাই।
কিন্তু নামকরা হাসপাতালের কর্মী ওই যুবক কেন এমন কাণ্ড ঘটাতে গেলেন? প্রাথমিক চিকিৎসার পর দীপঙ্করকে জেরা করে পুলিস জানতে পেরেছে, অতিরিক্ত লাভের আশায় মাস তিনেক আগে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ধার করে শেয়ার বাজারে লগ্নি করেছিলেন তিনি। কিন্তু লাভ তো দূরঅস্ত, লোকসানে জর্জরিত হয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে পাওনাদারদের চাপ। শেষমেষ সোনার দোকান থেকে গয়না হাতানোর ছক কষেন দীপঙ্কর। কিন্তু স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাধায় পরিকল্পনা ব্যর্থ হচ্ছে দেখে তাঁর গলায় ছুরি চালিয়ে দেন। পুলিস জেনেছে, এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও এক যুবক। তাঁকেও আটক করা হয়েছে। তবে ওই যুবকের দাবি, তিনি এই পরিকল্পনার বিন্দুবিসর্গও জানতেন না।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, তিন দিন আগেও ওই দোকানে এসেছিলেন দীপঙ্কর। তখন তিনি দেড় লক্ষ টাকা দামের দু’টি সোনার চেন দেখে আসেন। তারপর এদিন ক্রেতা সেজে দোকানে ঢুকে সেই দু’টি সোনার চেন দেখতে চান। সেগুলি হাতে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই বাধা দেন সঞ্জয়বাবু। তারপর এই ঘটনা। আটক যুবকের ভূমিকা সম্পর্কে খোঁজখবর চালানোর পাশাপাশি সোনার দোকান ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিস জানিয়েছে, লালবাজারের ডাকাতি দমন শাখা ঘটনার তদন্ত করছে। এদিন বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা ও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে সায়েন্টিফিক উইং। এই ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ী সুখদেব সেনশর্মার কথায়, ‘ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব মাত্র ৫০০ মিটার। তার মধ্যেই দিনেদুপুরে এমন ঘটনা তো রীতিমতো ভয়ের। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।’