নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জেলাজুড়ে সাইবার অপরাধীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে নথি সরবরাহ করছিল বাগদার দুই বাসিন্দা। বিভিন্ন জেলা থেকে তারা বিপুল পরিমাণ নথি সংগ্রহ করে টাকার বিনিময়ে সাইবার জালিয়াতিদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এগুলি ব্যবহার করেই খোলা হতো ভুয়ো অ্যাকাউন্ট। দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য উঠে এল সিআইডির হাতে।
গত কয়েকমাসে একাধিক সাইবার প্রতারকদের গ্রেপ্তার করেছে জেলা ভিত্তিক সাইবার ক্রাইম থানাগুলি। পাশাপাশি, সিআইডির হাতেও অনেকে ধরা পড়েছে। তদন্তে উঠে আসে, জালিয়াতির টাকা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। ভুয়ো নামে খোলা ওইসব অ্যাকাউন্টে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়াসহ বিভিন্ন জেলার বহু ব্যক্তির নাম রয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানেনই না যে তাঁদের নামে অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছে। কিন্তু এসব নথি প্রতারকরা পাচ্ছে কীভাবে, তার খোঁজ করতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, এগুলি সরবরাহ করার জন্য আলাদা একটি চক্র রয়েছে। তারা সারা জেলা ঘুরে টাকার বিনিময়ে এগুলি সংগ্রহ করছে। তারপর তা পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় সাইবার গ্যাগুলির হাতে। এমনকী, রাজ্যের বাইরেও যাচ্ছে ওইসব নথি। ধরা পড়া ব্যক্তিদের মোবাইল ঘেঁটে দু’জনের নাম পাওয়া যায়। জানা যায়, তারা সমস্ত নথি সরবরাহ করছে সাইবার অপরাধীদের। এরপর মোবাইলের সূত্র ধরে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
তাদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বিভিন্ন জেলার কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট বা ট্রাভেল এজেন্সি যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁদের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এই চক্রের। এই সমস্ত জায়গায় বিভিন্ন প্রয়োজনে ভোটার, আধার, প্যান-সহ বিভিন্ন নথি জমা দেন সাধারণ মানুষ। সেখান থেকেই দুই অভিযুক্ত কিছু নথি টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করছে। হোয়াটসঅ্যাপ বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের কাছে এগুলি পৌঁছে যাচ্ছে। এরপর সেগুলি চলে যাচ্ছে সাইবার অপরাধীদের হাতে। এরাজ্যে সাইবার জালিয়াতিতে যুক্ত অপরাধীদের কাছে ডেটা সরবরাহের মূল পান্ডা তারাই। এমনকী, অভিযুক্তরা সাইবার প্রতারকদের জন্যও ভুয়ো নামে অ্যাকাউন্ট খুলছে। সেখানে টাকা জমা পড়ার পর কমিশনের অঙ্ক কেটে নিয়ে বাকিটা নগদে পৌঁছে দিচ্ছে অপরাধীদের হাতে। এমনকী, সাইবার প্রতারণার টাকা ক্রিপ্টো কারেন্সিতে বদল করতে সাহায্য করছে তারা। বিভিন্ন নামে তারা ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্টও খুলেছে। এমনকী, মধ্যপ্রাচ্যে যে সমস্ত ব্যক্তির ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখানেও দুই অভিযুক্ত প্রতারণার টাকা পাঠাচ্ছে বলে খবর। তারা এইভাবে কত টাকা পাঠিয়েছে, তদন্তকারীরা এখন তৎপর তারই সন্ধানে।