অভিযোগ, গত ছ’মাস বাজারে এই প্রতিষেধক অমিল থাকলেও, তা নিয়ে হেলদোল নেই সরকারের। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, নবজাতকদের প্রতিষেধক দেওয়া হয় সরকারের টিকাকরণ কর্মসূচি প্রকল্পের মাধ্যমে। সেটির সরবরাহ নিয়ে আপাতত সমস্যা নেই। তবে ১২ বছর বয়সের পর থেকে বাকি যাঁদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের বাজার থেকে ওই প্রতিষেধক কিনতে হত। সেখানেই এখন সমস্যা। কারণ, যে তিন-চারটি সংস্থা হেপাটাইটিস বি-র প্রতিষেধক তৈরি করত, তারা এখন তা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রতিষেধকের আকাল দেখা দিয়েছে গত জুন থেকে। সেই সময়ে জানা গিয়েছিল সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু নভেম্বর হয়ে গেলেও, এখনও ওই প্রতিষেধক তৈরি শুরু করেনি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। যার ফলে হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে এমন ব্যক্তি এবং যাঁরা একটি বা দু’টিডোজ় ইতিমধ্যেই নিয়েছেন, তাঁদের ভোগান্তি হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হেপাটইটিস বি-ভাইরাস সরাসরি লিভারকে আক্রমণ করে। ক্রনিক ও অ্যাকিউট এই দুই ধরনের সংক্রমণ হয়। আক্রান্তের রক্ত-সহ যে কোনও দেহরস থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘দেশের মোট প্রাপ্ত বয়স্ক (নবজাতক নয় এমন) জনসংখ্যার ১ থেকে ২ শতাংশ এখনও ওই ভাইরাসের বাহক। ফলে তা থেকে বহু মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই প্রতিষেধক অমিলের বিষয়টি উদ্বেগের।’’ তিনি জানাচ্ছেন, জন্মের পরেইহেপাটাইটিস বি-প্রতিষেধক দেওয়া হয়। এর পরে এক মাস এবং ছ’মাস বয়সে আরও দু’টি ডোজ় দেওয়া হয়। তাতে পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু সেই বাচ্চা যখন বড় হয়, তখন বা আরও বেশি বয়সে যদি থ্যালাসেমিয়া, ক্যানসার, ডায়ালিসিসের রোগী হন, তখন অবশ্যই তাদের আবারও হেপাটাইটিস বি প্রতিষেধক দেওয়া জরুরি। পরিবারে কারও ওই রোগ ধরা পড়লে অন্য সদস্যদের প্রতিষেধক দেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, যৌন কর্মী, জেলবন্দিদের ওই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সকলকেই এক মিলিগ্রাম করে চারটি ডোজ় নিতে হয়। প্রতিষেধক তৈরি থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত ‘কোল্ডচেন’ বজায় রাখতে হয়। সেই পরিবহণ খরচ, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিষেধক বিক্রিতে লাভ হচ্ছে না বলে দাবি করছে প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি।
জাতীয় স্তরে হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রকল্পে এ রাজ্যে ক্লিনিকাল ক্ষেত্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই ওই প্রতিষেধক নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই ওই সংখ্যক মানুষকেপ্রতিষেধক বিক্রি করে লভ্যাংশ থাকছে না বলেই দাবি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির। কিন্তু এমন ভাবে প্রতিষেধক সরবরাহ বন্ধ হলেখুবই বিপদ। ’’