রাজ্যে গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে টানা দু’মাস উত্তর থেকে দক্ষিণ, সব জেলা ছুঁয়েই জনসংযোগ কর্মসূচিতে নেমেছিলেন অভিষেক। পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী বাছাইয়ের কথা বলে এই কর্মসূচি নেওয়া হলেও মূলত দলের ভোটের প্রচারই সেরেছিলেন তিনি। দলে শুদ্ধকরণ এবং প্রশাসনে সংশোধনের ‘প্রমাণ’ নিয়ে এ বার সেই কর্মসূচিরই দ্বিতীয় দফায় নামতে চলেছেন অভিষেক। তবে পঞ্চায়েতের মতো বিধানসভার ভোটে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টি এই কর্মসূচির সঙ্গে তিনি জুড়বেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। দলের এক নেতার কথায়, “জনপ্রতিনিধিদের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাজের নিয়মিত ও নির্দিষ্ট মূল্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে সরকারি প্রকল্পের সামগ্রিক রূপায়ণ বেশি গুরুত্ব পাবে।”
আগামী বিধানসভা নির্বাচন তৃণমূলের কাছে চতুর্থ পরীক্ষা। পরপর তিন বার সরকার গঠন করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক স্তরে আত্মবিশ্বাস বাড়লেও স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা। সরকারি কাজে দুর্নীতি, অনিয়ম, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়গুলি তো আছেই, সেই সঙ্গে আর জি কর হাসপাতালের মতো ঘটনার অভিঘাতের কথাও মাথায় রাখছেন দলীয় নেতৃত্ব। এই দফার জনসংযোগে এই বিষয়গুলি নিয়ে তৈরি ক্ষোভ-বিক্ষোভ স্তিমিত করে সাধারণের কাছ থেকে প্রস্তাব ও পরামর্শ গ্রহণের ভাবনা রয়েছে তৃণমূলের। ইতিমধ্যেই সাংসদ হিসেবে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে যে ‘হেল্প ডেস্ক’ তৈরি করা হয়েছে, সেই ‘মডেল’ রাজ্যব্যাপী আনা যায় কি না, তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের দফতর তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। দলের ওই নেতার কথায়, “রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেই পরিকল্পনার খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হবে।”
লোকসভার ভোট-যুদ্ধে তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা ‘দিল্লি বনাম বাংলা’ আখ্যানের পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। তার ভিত্তিতে ১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য বকেয়া নিয়ে তৃণমূলের প্রচার যথেষ্ট ‘ইতিবাচক’ প্রভাব ফেলেছিল ভোটের বাক্সে। এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের যে অভিযোগ উঠেছিল, ‘বঞ্চনা’র প্রচার তাকে ছাপিয়ে যেতে পেরেছিল বলে মনে করেন তৃণমূলের বড় অংশ। রাজ্যে ১০০ দিনের বকেয়া টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দলকে জনসমর্থনের অনেকটা ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল, দাবি করেন তাঁরা।
এ বার আবাস প্রকল্প নিয়ে টানাপড়েনকে ব্যবহার করতে চাইছে শাসক দল। ‘তৃণমূলে নবজোয়ারে’র কায়দায় রাজ্যব্যাপী বৃহৎ জনসংযোগ কর্মসূচিতে এই প্রকল্পকে সে ভাবেই ব্যবহার করতে চাইছে তারা। রাজ্য সরকারই ডিসেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্পে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে রাজনৈতিক স্তরে প্রচারে নিয়ে যাওয়াও অভিষেকের পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে। সেই কারণে দল ও স্থানীয় প্রশাসনে প্রস্তাবিত রদবদলের পরে নতুন এক দল নেতা-কর্মীকে নিয়ে বিধানসভা ভোটের আবহ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে তৃণমূলের ‘নব’ প্রজন্ম।