• বাংলা ভাষায় ‘পুষ্পা ২’ এলে বাংলা ছবি থেকে দর্শক মুখ ফেরাবে এটা হবে না: শ্রীজাত
    আনন্দবাজার | ১৮ নভেম্বর ২০২৪
  • ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ ছবির প্রচার ঝলক ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে সারা ভারতে। ৫ ডিসেম্বর ১০টি ভাষায় মুক্তি পাবে ছবিটি। বাংলা ভাষাও রয়েছে তাদের মধ্যে। বাংলা ভাষায় গান লেখার পাশাপাশি ছবির সংলাপ লেখার গুরুভার শ্রীজাতের কাঁধে। বঙ্গ কবির তেলুগু যোগ কী ভাবে?

    আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নে শ্রীজাত বললেন, ‘পুষ্পা ২’-এর তেলুগু এবং হিন্দি সংস্করণে শ্রেয়া ঘোষাল গেয়েছেন। ওঁর কাছে মূল ছবির সুরকার দেবী শ্রী প্রসাদ বাংলায় গান লেখার জন্য লেখকের খোঁজ করেছিলেন। শ্রেয়া তখন আমার নাম বলেন। তার পর ওঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।” অনুরোধ শুনে শ্রীজাত প্রাথমিক ভাবে একটু দ্বিধায় ছিলেন। শুরুতে দুটো গান লেখার বরাত পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ছয়!

    গত তিন সপ্তাহ আগে প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে ফের ফোন। এ বারের অনুরোধ, পুরো ছবির বাংলা সংলাপও লিখতে হবে তাঁকে! সময় মাত্র তিন সপ্তাহ। তিনি বললেন, “এ বার বিলক্ষণ ঘাবড়ে যাই। আমার হাতে অন্য কাজও রয়েছে। তা ছাড়া, সময় মাত্র তিন সপ্তাহ।” তাঁর আরও যুক্তি, এই কাজ তো শুধুই অনুবাদ নয়! ভিন্ন ভাষার ভাব, প্রকাশভঙ্গি, অনুভূতি যথাযথ রেখে তাকে বাংলায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি, সংলাপ যাঁর মুখে বসবে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর মুখে যেন সেই সংলাপ শেষ হয়, সেটাও দেখতে হবে। “জেনেসিস ফিল্মস পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধায়ক। তাদের সঙ্গে এর আগেও কাজ করেছি। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই কাজটি করেছি”, হাসতে হাসতে দাবি শ্রীজাতের। কাজ এখনও শেষ হয়নি। আট নম্বর রিলের আরও কিছু কাজ বাকি। তাই নিয়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে।

    পরিশ্রম থাকলেও ক্লান্তি ঘিরে ধরেনি, স্পষ্ট তাঁর পরের কথাতেই। শ্রীজাতের দাবি, “কাজটি পরিশ্রমের হলেও যথেষ্ট শিক্ষণীয়। তেলুগু সংস্কৃতি, রীতি-রেওয়াজ বাংলার থেকে অনেক আলাদা। সে সব মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। তার পরেও বলব, বাংলা ভাষায় তেলুগু ছবির গান এবং সংলাপ দিলে আমি তৃপ্ত।” মাথার উপরে বিস্তর চাপ ছিল কি? যতই বাংলা সংস্করণ হোক, তেলুগু ব্লকবাস্টারের মতো কিছুটা হলেও জনপ্রিয় সংলাপ বা গান তো লিখতে হবে তাঁকেও। অস্বীকার করেননি শ্রীজাত। বললেন, “বাংলা ‘পুষ্পা ২’-এর শীর্ষ সঙ্গীত গেয়েছেন তিমির বিশ্বাস। একটি রোম্যান্টিক গান রয়েছে শ্রেয়ার কণ্ঠে। গান দুটোই শ্রোতাদের পছন্দ হয়েছে। তাই কিছুটা আত্মবিশ্বাস ছিলই। বাকিটাও যাতে ভাল হয় তার জন্য আমার তরফ থেকে কোনও ফাঁক রাখিনি।” এ-ও জানাতে ভোলেননি, প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁর উপরে কোনও চাপ তৈরি করা হয়নি। উল্টে ছবির নির্মাতারা আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের এই ছবিটিও ব্লকবাস্টার হবে। অন্যান্য ভাষাতেও যদি ভাল ফল করে তা হলে আরও ভাল। তাঁদের বাণিজ্যিক পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে।

    সমাজমাধ্যমেও নিজের কাজ নিয়ে টুকরো কথা তুলে ধরেছেন শ্রীজাত। অনুরাগীরা তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। কিন্তু নিন্দকেরাও যে চুপ নেই! শ্রীজাতের পোস্ট ভাগ করে কিছু জনের দাবি, তাঁরাও এই ধরনের কাজ করেছেন। কেবল শ্রীজাতের মতো নিজের ঢাক নিজে পেটাতে পারেননি! সঙ্গে সঙ্গে কথা লুফে নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “নিন্দে তো করবেই। দেখুন, ঢাক পেটাতে পারলে অনেক কিছুই করা যায়। আমি সেই মানসিকতার নই।” তিনি আরও যোগ করলেন, কোনও কাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে তার প্রচারের দায়িত্বও কাজেরই অঙ্গ। তিনি সেটাই করেছেন। পাশাপাশি তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “পুষ্পা ২’-এর মতো ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি। কাজ করছি বিশ্বমানের ছবির সঙ্গে। লুকিয়ে রাখার মতো তো কোনও কাজ করিনি! তা হলে সকলকে জানাব না কেন?”

    কবি, গীতিকার, সংলাপ লেখার পাশাপাশি শ্রীজাত পরিচালকও। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কি তাঁর মনে হয়, বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় দক্ষিণী ছবি ডাব হলে বাংলা বিনোদন দুনিয়া আরও কোণঠাসা হবে?

    মানতে রাজি নন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি মানতে পারছি না। ‘লায়ন কিং’-এর হিন্দি সংস্করণে শাহরুখ খান কণ্ঠ দিয়েছেন। আমি দেখতে যাব। তার মানে কি মূল ছবিটি দেখব না?” একই বিশ্বাস তাঁর বাংলা ছবির দর্শকের উপরেও। জানিয়েছেন, ওটিটির তুমুল জনপ্রিয়তার পরেও ‘বহুরূপী’, ‘টেক্কা’ দর্শক দল বেঁধে দেখেছেন। অর্থাৎ, বাংলার দর্শক এতটাও অবিবেচক নন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)