• অঘোরী নৃত্যে মন জয় কোলেরডাঙা ঘোষপাড়া কমিটির
    বর্তমান | ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: কপালে ও মাথায় আগুন নিয়ে চলেছেন অঘোরীরা। কেউ বা হেঁটে চলেছেন জ্যান্ত বিষধর সাপ নিয়ে। কেউ বা বাজাচ্ছিলেন ডমরু। তার সঙ্গে চিরাচরিত কীর্তন তো রয়েইছে। সোমবার নবদ্বীপে এমনই এমনই টুকরো টুকরো ছবি ধরা পড়ল রাস কার্নিভালে। বাংলার মাটি, বাংলার জল গানটিতে নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা গেল বিশ্বভারতীর বেশ কয়েকজন পড়ুয়াকে। নবদ্বীপের রাস কার্নিভালের সুরে নিজেকে মিলিয়ে দিতে দূরদূরান্ত থেকে নবদ্বীপে ভিড় জমায় অসংখ্য মানুষ। এদিন দুপুরের পর থেকেই শোভাযাত্রার রাস্তার দু’ধারে, এমনকী বাড়ির ছাদেও থিকথিকে ভিড় লক্ষ্য করা যায়।


    সোমবার বিকেলে পোড়মাতলায় ফিতে কেটে কার্নিভালের সূচনা করেন কৃষ্ণনগর সদরের মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা, পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা। কার্নিভালে ১৮টি ক্লাব ও বারোয়ারি অংশ নিয়েছিল। প্রতিটি পুজো কমিটির মহিলারা একই রঙের কাপড় পরে শোভাযাত্রায় পা মেলান। পুরুষদের পরনে ছিল একই রঙের পাঞ্জাবি।


    কোলেরডাঙা ঘোষপাড়া এবছর চন্দননগরের লাইটিংয়ের মাধ্যমে ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহেশ্বরের তিনটি ট্যাবলো তৈরি করে নজর কাড়ে। ঘোষপাড়ার শোভাযাত্রা চারজন মনীষীর মডেল সাজানো হয়। তাদের নীচে ছিল জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি জীবন্ত প্রতিকৃতি। একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের ট্যাবলোও ছিল। এই পুজো কমিটির শোভাযাত্রায় উত্তরপ্রদেশের অঘোরী নৃত্য, উজ্জয়নীর মহাকাল মন্দিরের ডমরু বাদকের একটি দলকে ডমরু বাজাতে দেখা যায়। যেহেতু এই বারোয়ারির মূর্তি গঙ্গা মাতা। সেই কারণে গঙ্গা আরতিরও ব্যবস্থা করানো হয়। একই সঙ্গে ১০জন পুরোহিতের দল গঙ্গা মাতার উদ্দেশে আরতি করছিলেন। 


    উত্তরপ্রদেশের অঘোরী শিল্পী রবি মহাকাল বলেন, ৯৫০ কিলোমিটার দূর থেকে আমরা ন’জন শিল্পী এসেছি। এখানে জ্যান্ত বিষধর সাপ নিয়ে অঘোরী নৃত্য পরিবেশন করব। ঘোষপাড়া বারোয়ারির আয়োজক মানস সাহা বলেন ঘোষপাড়া নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই তৈরি করে। আবার নিজেরাই তা ভাঙে। ঘোষপাড়া পুজো কমিটির অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা লালু ঘোষ বলেন, এই কার্নিভাল সফল করার জন্য বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য পিন্টু ঘোষ ও স্থানীয় বাসিন্দা নন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় সহ কোলেরডাঙা ঘোষপাড়া দক্ষিণ অঞ্চলের সমস্ত মানুষ।


    অন্যান্য বারোয়ারিগুলিও তাদের শোভাযাত্রা নানাভাবে কালারফুল করে তোলে। প্রায় প্রতিটি বারোয়ারিতেই মহাপ্রভুর প্রতিকৃতি নিয়ে খোল করতাল  সহযোগে কীর্তন করতে দেখা যায়। এছাড়া কেউ এনেছিল কেরলের শিল্পীদের। ওড়িয়া ফিল্মের এক অভিনেতাকে এদিনের শোভাযাত্রায় দেখা যায়।


    প্রাচীন মায়াপুর শিবপুজো কমিটির সভাপতি রাম ঘোষ ও সম্পাদক সমরজিৎ মণ্ডল বলেন, আমাদের এই প্রাচীন মায়াপুর এলাকাতেই মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই এলাকায় গৌরাঙ্গ জন্মস্থান মন্দির। সেই কারণে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর সমস্ত লীলা থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। 


    ষড়ভুজ গৌরাঙ্গ পুজো কমিটি ‘অদ্বৈত প্রভুর আহ্বানে মহাপ্রভুর আগমন’ থিমে কার্নিভালে অংশ নেয়। সেই অদ্বৈত প্রভুর সাজে সেজে ছিলেন নবদ্বীপ পুরসভার কাউন্সিলার সুকুমার রাজবংশী। কাত্যায়ণী মাতা পুজো কমিটি কার্নিভালে নবদ্বীপ পুরসভা পরিচালিত সকার কাপের থিমে ট্যাবলো সাজিয়ে ছিল। মহাকাল পুজো কমিটির তরফে শিব সেজে একদল মানুষকে গান করে আর নাচতে নাচতে শোভাযাত্রায় দেখা গেল।  


    নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমান কৃষ্ণ সাহা বলেন, ২০১৭ সাল থেকে কার্নিভাল শুরু হয়েছে। মাঝখানে করোনার জন্য এক বছর বন্ধ ছিল। শনিবার ও রবিবার রাসের শোভাযাত্রা (আড়ং) হয়ে গিয়েছে। সোমবারের কার্নিভালে যারা ভালো পারফরম্যান্স করবে, তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)